ভয়ংকর এলএসডি-আইস: যা ঘটেনি সেটাই দেখেন আসক্তরা
নিউজ ডেস্ক।।
দেশে নতুন চারটিসহ যে ২৭ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে ভয়াবহতার তালিকায় এগিয়ে আছে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফিটামিন।
বুধবার ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমণিকে আটক করার সময় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমণির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি আইস ও এলএসডিও উদ্ধার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়েও শক্তিশালী। ইয়াবায় মিথাইল অ্যামফিটামিন ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট পরিমাণে। আইস বা ক্রিস্টাল মেথ মানে শতভাগ মিথাইল অ্যামফিটামিন।
মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করেন এমন চিকিৎসকরা বলছেন, এলএসডি এক ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ। এটি সেবনে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো মাত্রাতিরিক্ত উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। মারাত্মক হ্যালুসিনেশনও হতে থাকে। যা নেই সেটাই দেখে সেবনকারী, মাথার ভেতর শব্দও শোনে। যা সামনে নেই, সেটারও স্পর্শ পায়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এলএসডি সেবনকারীদের অনেকেই বলেন, তারা কালার (রঙ) ‘শুনতে’ পায়, শব্দ ‘দেখতে’ পায়। এমন বিচিত্র সব অনুভূতি হয়। এটা যদি ‘ব্যাড ট্রিপ’ তথা খারাপের দিকে গড়ায় তবে হত্যা বা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে সেবনকারী। এমন ঘটনা আমাদের দেশেই ঘটেছে।’
এসব মাদকের সাইডএফেক্ট
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এলএসডি যখন কেউ নেয় তখন তার সাফোকেটিং ব্রিদিং হয়। ঘামাতে থাকে। বুক ধড়ফড় করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তখন অনিয়ন্ত্রিত যেকোনও আচরণ করতে পারে।’
অপরদিকে, আইস হলো ইয়াবার উন্নত সংস্করণ- এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সেবনে ঘুম কমে যায়। অবসাদ বাড়িয়ে তোলে। তখন এর ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সেবনকারী। একপর্যায়ে অলীক সব চিন্তা শুরু করে আসক্ত ব্যক্তি।’
আইস মানুষের হৃৎস্পন্দন এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যে অনেক সময় কার্ডিও টক্সিসিটি তৈরি হয়। যার কারণে হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।
এসব মাদক নেয় কারা?
কোন বয়সের রোগীদের এই সময় বেশি পাচ্ছেন? জানতে চাইলে চিকিৎসক ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এসব মাদক অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ধনীরাই বেশি নিচ্ছে।
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বয়সটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগে এ কাতারে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের পাওয়া যেত। এখন মধ্যবয়সীদেরও রোগী হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে।’
৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে অনেক রোগী পাচ্ছি জানিয়ে ডা. হেলাল বলেন, ‘এটা কোনও জরিপ নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ব্যবসায়ী এবং মধ্যবয়সী প্রতিষ্ঠিত মানুষরাই আসছেন অনেক।’
তবে এখন পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা কম হলেও অনেক নারী আসক্তকেও রোগী হিসেবে পাচ্ছেন জানিয়ে ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন নারী আসক্তের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।’
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখেছি, আইস ও এলএসডি বেশ ব্যয়বহুল মাদক। ধনী পরিবারের সন্তানরা এসব সেবন করে। প্রতিবার আইস সেবন করতে তাদের খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা।’