সড়ক দুর্ঘটনায় ভাঙ্গা পা নিয়ে হাসপাতালে মনেক্কা বেগম, ৫৫ দিনের দেখা মিলেনি স্বজনের
মহানগর ডেস্ক।।
মনেক্কা বেগম সড়ক দূর্ঘটনায় ভাঙ্গা পা’ নিয়ে মানষিক ভারসাম্যহীন মনেক্কা বেগম(৭৫) ৫৫দিন ধরে পড়ে আছেন দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১২নং বেডে।
মনেক্কা বেগম এখন তার বাড়ি ফিরে যেতে চান। দীর্ঘ সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসীক চিকিৎসক ডাঃ মঞ্জুর হোসেন, ওয়ার্ড সুপারভাইজার জিন্নাত আরা বেগম, কফি হাউজ’র বন্ধু সদস্য গোলাম রাব্বী প্লাবন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পুলিশ সদস্য মোঃ নুরুজ্জামান, বড়শালঘর এলাকার সিএনজি চালক মোঃ শাহ আলম, দেবীদ্বার রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশারসহ বেশ ক’জন মানবিক মানুষের সার্বিক সহযোগীতায় এ পর্যন্ত তার চিকিৎসা সেবা চলে আসছে।
গত ২০ জুলাই (ঈদের পূর্ব রাতে) রাত সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মীরপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্নে একটি দ্রæতগামী মোটর সাইকেলের ধাক্কায় ওই মহিলার পা’ ভেঙ্গে সড়কে পড়েছিলেন।
ওখান থেকে ঈদের ছুটিতে আসা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা পুলিশ সদস্য মোঃ নুরুজ্জামান পিকাপ ভ্যানে তার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় কবলিত ওই মহিলাকে উদ্ধার করে।
বড়শালঘর এলাকার সিএনজি চালক মোঃ শাহ আলম’র মাধ্যমে তাকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের পাঠিয়ে দেন।
এসময় দূর্ঘটনায় মোটর সাইকেল আরোহীকে রোগির সাথে দেবীদ্বার এসে আহত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং সিএনজি ভাড়া দেয়ার শর্তে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মোটর সাইকেল আরোহী কৌশলে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ মঞ্জুর হোসেন ও নার্স সুপারভাইজার জিন্নাত আরা বেগম’র নজরে আসায় তারা নিজ দায়িত্বে তার চিকিৎসা সেবা দেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র/পত্রিকায় লেখালেখির পর মনেক্কা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্বে ‘দেবীদ্বার দরিদ্র রোগী কল্যাণ সমিতি’ এবং গোলাম রাব্বী প্লাবন’র নেতৃত্বে কফি হাউজ’র বন্ধুরা এগিয়ে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসীক চিকিৎসক ডাঃ মঞ্জুর হোসেন বলেন, তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন পায়ের ভাঙ্গা অংশ এখনো জোড়া লাগেনি। তার পেটের ব্যথা এবং শরীরে স্কিন ইনফেকশন ছিল মারাত্মক, এখন অনেকটা আরোগ্যের পথে।
তবে মনেক্কা বেগম কিছুটা মানষিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় শরীরের চুলকানী বেড়েগেলে পা’য়ের বেন্ডেজটাও খুলে ফেলে দেন। তাকে দেখভালের জন্য একজন নার্স সার্বক্ষনিক রাখা হয়েছে।
স্মরণ শক্তির অভাব হলেও এখন তিনি কিছু কিছু কথা বলতে পারেন, তবে শুরু থেকে তার পরিচয় সম্পর্কে যে কথাগুলো বলে আসছেন এখনো তিনি সেই কথাগুলোই বলে আসছেন। দির্ঘদিন ধরে তার পরিবারের খোঁজ না পাওয়ায়, আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পায়ের অপারেশনসহ চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মনেক্কা বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহাম্মেদ কবির, আবাসীক চিকিৎসক ডাঃ মঞ্জুর হোসেন, নার্স সুপার ভাইজর জিন্নাত আরা বেগম, কফি হাউজ’র বন্ধু সদস্য গোলাম রাব্বী প্রাবনসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের নিয়ে এক বৈঠকে তার উন্নত চিকিৎসা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংরাই শিশু পরিবারে(মহিলা) হস্তান্তর করে তাকে সমাজসেবার নিয়ন্ত্রনে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।
সড়ক দূর্ঘটনায় আহত এবং অজ্ঞাত মহিলা হওয়ায় তাকে পুলিশের সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে সমাজ সেবায় হস্তান্তর করার নিয়ম থাকায় এ জটিলতা এড়িয়ে যান অফিসার ইনচার্জ।
এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে মনেক্কা বেগমের দেয়া তথ্যানুযায়ী ঢাকা মীরপুর-১২ এর মুসলিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশের আমজাদা খাঁর বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত করতে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ জানানো হয়, ওই অনুরোধও কার্যকর না হওয়ায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্মরনাপন্ন হই, তিনি দাপ্তরিক জরুরী কাজের কারনে বিষয়টি আমলে নেননি।
অবশেষে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আবু তাহের’র স্মরনাপন্ন হলে, তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তর’র প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন এবং মীরপুর এলাকার সমাজসেবা কার্যালয়ের দু’জন নারী কর্মীকে ঘটনাস্থল পাঠিয়ে মনেক্কা বেগমের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী তার স্বজনদের খোঁজ পান। মনেক্কা বেগমের পরিবারের পক্ষথেকে দ্রুত যোগাযোগের কথা বললেও ৩দিন অতিবাহিত হতে চললেও স্বজনদের দেখা এখনো মেলেনি।
বিভিন্ন সময়ে মনেক্কা বেগমের সাথে কথা বলে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে চাইলে প্রথম দিকে হাউ মাউ করে কেদে উঠলেও এখন কাদেন না। তিনি জানান তার বাসা ঢাকা পল্লবী থানার মীরপুর ১২ নম্বর এলাকার মুসলিম বাজারের পাশের মসজিদ সংলগ্ন আমজাদ খাঁ’র বাড়ি।
তিনি টির কুমারী, বাবার নাম মৃত; আজাদ খাঁন, পেশায় রেলওয়ে কর্মকর্তা ছিলেন, ২ ভাই ও ৬ বোন। দুই ভাই মোঃ মামুনুর-রশিদ (মামুন) ও মোঃ পনির মিয়া (পনির)। ৬ বোন রেখা, শান্তা, করুনা, অরুনা, নিলু, মনেক্কা। তিনি কিভাবে এখানে আসলেন সে সম্পর্কে বলেন ঢাকা থেকে হাটতে হাটতে এখানকার গোমতী নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছি।
তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায় ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবারের একজন সদস্য জানান, মনেক্কা বেগমের দেয়া সকল তথ্যই সঠিক। তিনি বিয়ে করেননি। তাই তার বাবা কিছু সম্পত্তি ওনার নামে লিখে দিয়ে গেছেন।
পারিবারিকভাবে এরা বিশাল অর্থবিত্বের মালিক। তার পরও পিত্রালয়ে থাকার কারনে সারা জীবন ঝি’ চাকরানীর কাজ করে গেছেন। মানষিক নির্যাতন সইতে না পেরে ক্ষোভে যন্ত্রনায় নিজ থেকেই তিনি মাঝে মাঝে হারিয়ে যান।
তিনি এর আগে আরো ৪ বার হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এসেছেন। গত ঈদের আগে আবারো হারিয়ে যান। ওই ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হলেও তাকে খুঁজে পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়ায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।
মনেক্কা বেগমকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানার পর তাকে আনার পরিকল্পনা হচ্ছে।