সিজদায় সুস্থ থাকে ফুসফুস
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক।।
জীবাণু ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে সিজদার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত। করোনাভাইরাস প্রধানত মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটা বড় অংশের ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে; যাকে বলা হয় পালমোনারি ফাইব্রোসিস। ফুসফুসের এই ক্ষতি থেকে সহজে সেরে ওঠা যায় না। এর উপসর্গগুলো হলো—মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ।
শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ব্যাঘাতের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এমন শারীরিক জটিল ও কঠিন অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ফুসফুসকে গতিশীল করা এবং ভাইরাসের আক্রমণ নির্ণয় করতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা, গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করা।
আর ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে এবং সংক্রমণ ও জীবাণুর বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা সক্রিয় করতে সিজদার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সিজদা অবস্থায় ফুসফুস প্রসারিত হয় এবং পূর্ণ ফুসফুসে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়। এই অবস্থায় ফুসফুস জীবাণু ও ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।
ফুসফুসের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যমে শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করার সময় গ্রহণ করা অক্সিজেনকে রক্তে পৌঁছে দিয়ে দূষিত বায়ুকে উপকারী বায়ুতে রূপান্তর করে।
ফুসফুসের দুটি দিক : ডান ও বাম। ডান দিকে তিনটি কোষ এবং বাম দিকে দুটি কোষ। মেডিক্যাল সায়েন্সে এই কোষগুলো লোব বলে পরিচিত।
গঠন ও আকৃতি অনুসারে ফুসফুসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উর্ধ্ব, মধ্য ও নিম্ন অংশ। ঊর্ধ্ব ভাগে রক্তচাপ খুব কম থাকে দাঁড়ানো অবস্থায়।
তাই এই অবস্থায় সে অংশ সংকুচিত ও লেপটে হয়ে যায়। এই অংশকে ফুসফুসের অনুর্বর ভাগ বলা হয়। কারণ ফুসফুসের অন্যভাগের তুলনায় এখানে রক্তের অংশ খুব কমই থাকে।
মধ্যভাগ যেহেতু হৃদয়ের স্তরে থাকে, তাই এখানে রক্তের প্রবাহ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে। আর নিম্ন ভাগের অবস্থান হয় হৃিপণ্ডের নিচে। তাই এখানে রক্তের চাপ বেশি থাকে। এমনকি অতিমাত্রায় রক্ত প্রবাহের কারণে ফুসফুসের অভ্যন্তরে কৈশিকটি সর্বদা বৃদ্ধি হতে থাকে।
সাধারণত আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি তখন ফুসফুস সম্পূর্ণ প্রসারিত হয় না। ভেতরের বাতাস পরিপূর্ণ বের হয় না এবং নতুন বাতাসে সমস্ত অংশ ভরপুর হয় না; বরং অর্ধেক ফুসফুস অথবা তার চেয়ে কম বা বেশি অংশ পূর্ণ হয়।
ওপরের অংশ প্রসারিত হয় না ও এর কার্যকারিতা সক্রিয় থাকে না। এ অবস্থায় ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করতে শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন ব্যায়াম এবং দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়মগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বলা যায়—ফুসফুসকে সক্রিয় রাখতে সিজদার উপকারিতা এবং এই ব্যায়মগুলোর উপকারিতা সমান নয়। সিজদা অবস্থায় ফুসফুসের ঊর্ধ্ব ও মধ্য ভাগ হৃদয়ের নিচে চলে যাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহ হয়।
অনুরূপ সিজদার সময় ফুসফুস পরিপূর্ণ প্রসারিত হয়। হাদিসে আছে, সিজদার সময় নবী (সা.) বাহুকে বুক থেকে এত দূরে রাখতেন যে তার বগলের সাদা অংশ দেখা যেত। মাটি থেকে বাহু ওপরে তুলে এবং বুক থেকে দূরে রেখে সিজদার এই বিশুদ্ধ অবস্থায় ফুসফুস সম্পূর্ণ প্রসারিত হয় এবং ঊর্ধ্বভাগে প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়।
দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় ফুসফুসের ওপরের অংশ হৃিপণ্ডের স্তরের ওপরে অবস্থানের কারণে রক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রবাহিত হয় না। পক্ষান্তরে সিজদার সময় ফুসফুসে প্রচুর রক্ত প্রবাহিত হয়, যেমন ওপর থেকে নিচে পানি প্রবাহিত হয়। সিজদা অবস্থায় ফুসফুসে বেশি রক্ত প্রবাহের ফলে ফুসফুসের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ প্রসারিত হয়।
কেননা দাঁড়ানো অবস্থায় ওই অংশ দুটি কার্যত ক্রিয়াহীন ও আবদ্ধ থাকে। কিন্তু সিদজার সময় উক্ত অংশ দুটি হৃিপণ্ডের স্তরের নিচে থাকার ফলে প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহের ফলে অংশ দুটি প্রসারিত ও বিস্তৃত হয়ে যায়।
‘ইজাজুল কোরআন ওয়াস-সুন্নাহ’