৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ নৃশংসতম একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলার ১৮বছর

নিউজ ডেস্ক।।
রক্তাক্ত বিভীষিকার ২১ আগস্ট আজ, বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

এতে আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও গ্রেনেডের বিস্ফোরণে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। সেই নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৮তম বার্ষিকী আজ রোববার।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের একুশ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষ হওয়া মাত্রই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। হাজারো নেতাকর্মীর ওপর একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতায় মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল।

স্প্লিন্টারের আঘাতে অনেকের হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার, মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদের সেই অবর্ণনীয় মর্মান্তিক দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি দেশের মানুষ।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে নিহত বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ জনে। আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।

হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজও দিনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় কাতরান অনেক নেতাকর্মী।

এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।

পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তবে গ্রেনেড হামলার বিচারে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। সেদিন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হামলাটি চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে শেষ করে দিতে। যদিও অলৌকিকভাবেই সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রোববার ইতিহাসের সেই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সূত্র: বাসস

আরো দেখুন
error: Content is protected !!