২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় স্বামীর পরকিয়ায় স্ত্রীর আত্মহনন

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লয় স্বামীর ২য় স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার প্রথম স্ত্রী। অভিযোগও করেছিলেন পুলিশের কাছে। সবকিছু স্বামীর সামনে ঘটলেও বিচার পাননি খায়রুন নাহার ঝুনু। অভিমানে শেষমেষ বেছে নেন আত্মহননের পথ।

স্বামীর সাথে অভিমান করে দুই সন্তানের জননীর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। শনিবার রাত ৩টায় কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নাম খায়রুন নাহার ঝুনু (৪০)। ঘটনার পর থেকে তার স্বামী মোঃ শাহ আলম পলাতক রয়েছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মোঃ শাহআলম বীজের ব্যবসা করেন নিমসার বাজারে। দোকানের কর্মচারীর বোন লাকী আক্তার পাখির পারিবারিক ঝামেলা মেটানোর সূত্রে লাকি আক্তারের সাথে সখ্যতা হয় শাহআলমের।

সেই থেকে প্রেম পরকিয়া সম্পর্ক। গত ১৪জুন শহরের একটি বাসায় লাকি আক্তার ও শাহআলমকে দেখতে পান প্রথম স্ত্রী খায়রুন নাহার। সেখানেই তাকে মারধোর করে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের। এরপর সামাজিকভাবেও বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

নিহত খায়রুন নাহার ঝুনুর দুই সন্তানের মধ্য বড় মেয়ে হাফসা জাহান সামিয়া (১৬)। সে ইস্পাহানী স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে আলামিন সিয়াম (১৪) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

নিহত খায়রুন নাহারের বড় মেয়ে সামিয়া বলেন, গত তিন বছর আগে আমার বাবা শাহআলম প্রতিবেশী লাকি আক্তার পাখির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে প্রায়ই আমার বাবা আমার মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করতো। এছাড়াও গত ১৪ জুন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বাসায় ওই মহিলা ও আমার বাবা আছে এমন খবরে আমার মা ওই বাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়।

ওইদিন লাকি আক্তার পাখির স্বজনরা আমার মাকে বেদম প্রহার করে। এ ঘটনার ৩ দিন পর আমার মা গত ১৭ জুন কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করে।

সামিয়া আরও বলেন, গতকাল রবিবার রাতে মা বাবাকে বলে, হয় আমার সাথে না হয় ওই মহিলার সাথে থাকো। এ নিয়ে তর্কাতর্কির মাঝে আমার আম্মা রাত দেড়টায় গোপনে বিষপান করে। পরে আমি বিষয়টি টের পেয়ে যাই। তখন আমার মা বলে তোমরা আমাকে মাফ করে দিও।

পরে আমার আব্বু আম্মাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে আম্মা মারা যায়।

স্থানীয় সালিশী রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, খায়রুন নাহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকবার সালিশে বসেছি। শাহআলম তার ২য় বিয়ের কথা কখনও স্বীকার করেননি। এটা তার প্রতারণা ছিল। তার প্রথম স্ত্রী বেশ কয়েকবার ২য় স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়।

দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় লাশ উদ্ধার করি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইননানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!