কুমিল্লায় বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্রসহ অপহরনকারী আটক ০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ কর্তৃক “বি অনেষ্ট বাংলাদেশ (বি.এইচ.বি)” অপহরণ চক্রের মূল হোতা জিসান আহম্মেদ(৩২)সহ চক্রের ০৬ সদস্য গ্রেফতার। অপহৃত ভিকটিমসহ বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।
সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম সহাসড়কে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
উক্ত অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এলাকার সাধারণ জনগণে ও মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মধ্যে ব্যপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাগুলো স্থানীয় গণমাধ্যমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ঘটনাগুলো ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে র্যাব ঘটনা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা শুরু করে।
এছাড়াও ভূক্তভোগীদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আবেদন পাওয়া যায়।
ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহাসড়কে অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর একটি চৌকস গোয়েন্দা দল গোপনে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহাসড়কে প্রবণ এলাকায় কঠোর নজরদারি শুরু করে।
এরই মধ্যে গত ০২-০৫-২০২২ইং তারিখ দুপুরে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা অফিসে এসে মোসাঃ রিনা আক্তার (২৫), স্বামী-মোঃ ইমাম হোসেন, পিতা-মোঃ জাফর, সাং-নতুন পাড়া, থানা-ভূজপুর, জেলা-চট্টগ্রাম তার স্বামীকেকে বা কাহারা অপহরন করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করছেন এই মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রাপ্তির পর র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ০৩ জুন ২০২২ইং তারিখ রাতে ঢাকা জেলার ডিএমপি, ডেমরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অপহরন চক্রের মূল হোতা জিসানসহ ছয় সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো ১। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার উল্টর নছরুদ্দি গ্রামের মৃত শাহ আলম এর ছেলে মোঃ জিসান আহমেদ(৩২); ২।খুলনা জেলার চালনা থানার কামার খোলা দাকোপ গ্রামের মোঃ মনিরুল ইসলাম গাজীর ছেলে মোঃ ইসমাইল গাজী(২৫); ৩। পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার পশ্চিম পশারী বুনিয়া গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন এর ছেলে মোঃ জায়েদ আল শাহান (২১); ৪। খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার গদাইপুর গ্রামের মোঃ ছবুর গাজীর ছেলে মোঃ এখলাছুর রহমান ফাহিম(১৯); ৫। সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানার দীঘিরপাড় গ্রামের মোঃ মারাফত আলীর ছেলে মোঃ আবির হোসেন(২১) এবং ৬। ঢাকা জেলার ডেমরা থানার ডেমরা গ্রামের হাজী আঃ সালাম এর ছেলে মোঃ হাবিবুর রহমান(৩৪)।
একই তারিখে আটককৃত আসামীদের নিকট জিম্মি থাকা অবস্থায় অপহৃত ভিকটিম মোঃ ইমাম হোসেন (২৭)’কে উদ্বার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের নিকট থেকে নিম্মোক্ত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় ০৪টি সুইচ গিয়ার চাকু, ০২টি ধারালো চাকু, কচটেপ এবং ০১টি কাঠেরবক্স যার মধ্যে অসংখ্য দাতব্য যন্ত্রপাতি রয়েছে।
ভিকটিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় গত ০২-০৬-২০২২ইং তারিখ সন্ধা আনুমানিক ২১:০০ ঘটিকার সময় চাকুরীর কাজে যোগদানের জন্য কুমিল্লা হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার জন্য হোটেল নুর জাহানের সামনে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করলে ভিকটিমের একই গ্রামের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মোঃ জাফর আহমেদ(২১), পিতা-আলী আহমদ, সাং-কালাপানি স্কুল পাড়া, থানা- মানিকচড়ি, জেলা-খাগড়াচড়ি এর সাথে দেখা হয়।
জাফরও ঢাকা যাবে বিধায় ভিকটিম তার সাথে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে নুরজাহান হোটেলের সামনে গাড়ীর জন্য অপেক্ষ করতে থাকে।
অপেক্ষার একপর্যায়ে একটি কালো হাইচ গাড়ী হোটেল নুরজাহানের সামনে এসে দাড়ায় এবং হাইচে থাকা একব্যক্তি বলে আমরা ঢাকায় যাচ্ছি কম টাকায় ঢাকা যেতে হলে গাড়িতে আসতে পারেন। তখন ভিকটিমরা ঢাকা যাওয়ার জন্য হাইচে উঠে।
গাড়ীতে উঠার একপর্যায়ে কোর্টবাড়ী বিশ্বরোড পার হওয়ার পর আসামীরা ভিকটিমদের চাকু দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে তাদের হাত পাঁ বেধে ফেলে ভিকটিমদের সাথে থাকা মোবাইল এবং টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে ভিকটিমদের হত্যার হুমকি দিয়ে দুই লক্ষ টাকা করে মুক্তিপন দাবী করে।
পবর্তীতে রাত গভীর হলে আসামীরা ভিকটিদের নিয়ে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে নামলে ভিকটিম মোঃ জাফর(২১) কৌশলে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আসামীরা অপর ভিকটিম ইমাম হোসেনকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায় এবং অপহরনকারীরা ভিকটিমকে অমানবিক নির্যাতন করে মুক্তিপনের টাকার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে চাপ দিতে থাকে।
গ্রেফতারতকৃত আসামীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানাযায়, চক্রের সদস্য ১। মোঃ জিসান আহমেদ (৩২); ২। মোঃ ইসমাইল গাজী(২৫) ; ৩। মোঃ জায়েদ আল শাহান(২১); ৪। মোঃ এখলাছুর রহমান ফাহিম(১৯) এবং ৫। মোঃ আবির হোসেন(২১) তারা সকলেই নারায়নগঞ্জ জেলার মদনপুর কেওডালায় অবস্থিত এলিট সিকিউরিটি গার্ড এর অধিনস্থ্থ অলিম্পিক কোম্পানীর বিস্কুট শাখায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করে এবং ৬। মোঃ হাবিবুর রহমান (৩৪) ড্রাইভার হিসেবে তাদের সহযোগী হয়ে কাজ করে। চাকুরীর সুবাদে চক্রের মূল হোতা জিসানের সাথে বাকি সদস্যদের পরিচয় হয়।
তারা ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং মাসে “বি অনেষ্ট বাংলাদেশ (বি.এইচ.বি)” নামক একটি গ্রুপ তৈরী করে।পরবর্তীতে এই গ্রুপের সদস্যরা অল্প সময়ে কিভাবে অধিক অর্থ উপর্জন করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।
তাদের এই চিন্তাধারা থেকেই একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত উপনীত হয় তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাকুরীর পাশাপাশী খুব সহজেই অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক টাকা উপার্যন করতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরী করে।
প্রতি সপ্তাহে গ্রুপের দুইজন সদস্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রেকি (পর্যবেক্ষণ) করার কাজে নিয়োজিত থাকে। মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোন কোন জায়গা হতে পথিমধ্যে সাধারণ যাত্রীরা যানবাহনের খোজ করে, সেই জায়গা গুলোকে টার্গেট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পরবর্তীতে রেকি (পর্যবেক্ষণ)’তে নিয়োজিত সদস্যরা টার্গেট পয়েন্ট সম্পর্কে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপে তথ্য উত্থাপন করলে মূলহোতা জিসান এর সম্মতিক্রমে মিশনের তারিখ নির্ধারণ হয়।
মিশনের পূর্বে তারা স্ব-শরীরে বৈঠক করে কে কোন জায়গা হতে পূর্ব নির্ধারিত পয়েন্টে মিলিত হবে, কে গাড়ি ভাড়া করবে এবং কার কি কাজ হবে তা বন্টনের মাধ্যমে গত এক বছর যাবৎ তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অসংখ্য চুরি, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির মিশন সম্পন্ন করেছে।
গত ০২ জুন ২০২২ইং তারিখে নারায়নগঞ্জ জেলা সোনারগাঁও থানার সোনারগাঁও আনন্দ বাজার গ্রামের জনৈক ভ্থক্তভোগীকে অপহরণ করে তার পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপন আদায় করে ।
পরবর্তীতে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত টার্গেট সনামধন্য হাসপাতালের জনৈক ডাক্তার কে অপহরণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
পরে তারা নতুন টার্গেট খোজার জন্য কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে। পরবর্তীতে ভিকটিম মোঃ ইমাম হোসেন এবং মোঃ জাফরকে টার্গেটে পরিনত করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি ও মোবাইল ফোন বিশ্লেষন করে তাদের পরবর্তী টার্গেট পাওয়া গিয়েছে। যেখানে আগামী ০৬ জুন ২০২২ইং তারিখে তাদের সুনামধন্য একটি ব্যাংকের রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানার বাসাবো শাখা হতে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল।
তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপটি চেক করে দেখা গিয়েছে তারা ব্যাংকের বাসাবো শাখা ইতিমধ্যে রেকি (পর্যবেক্ষণ) সম্পন্ন করেছে।
তাদের পরিকল্পনা ছিল, চক্রের দুই সদস্য একাউন্ট খোলার নাম করে ব্যাংকে প্রবেশ করবে এবং অধিক টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের পর্যবেক্ষণ করবে। বাকি সদস্যরাকে কোথায় অবস্থান নিবে, টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলে কোন রাস্তার কোথায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে তার নিকট রক্ষিত টাকা ছিনতাই করবে, এমনকি ছিনতাইয়ের পরে কোন লোকেশনে গিয়ে তারা গা ডাকা দিবে এ সমস্থ তথ্য তারা এড়ড়মষব ম্যাপে স্ক্রীনশট দিয়ে রেখেছে।এছাড়াও আসামীরা ক্রমানয়ে বড় বড় মিশন পরিকল্পনার বিষয়টিও স্বীকার করেছে।
উক্ত বিষয়ে ০৬জনকে এজাহার নামীয় এবং ১। মোকতাদির(২৫); ২। মাকসুদ(২২); ৩। মোঃ ইলিয়াস(২৪)’কে পলাতক আসামী করে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।