‘স্ত্রীকে খুশি করতে সীমিত পরিসরে সত্য গোপনের সুযোগ আছে’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রিসোর্টের কাণ্ড ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। সেজন্য তিনি মর্মাহত।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এ কথা বলেন মামুনুল হক।
গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবস্থানকালে মামুনুল হককে ঘেরাও করা হয়। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন এক নারীও। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মামুনুল এক নারীসহ আটক হয়েছেন। যদিও ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক। ঘেরাওকারীদের ক্ষমতাসীন দলের লোক বলেও অভিযুক্ত করেন তিনি। ছড়ানো আরেকটি ভিডিওতে সেই নারী নিজেকে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলে পরিচয় দেন। অবশ্য খানিকবাদেই তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান হেফাজত নেতাকর্মীরা।
পরে মামুনুলের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রীসহ একাধিক ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়। মামুনুলের দাবিকৃত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আর ঝর্ণার প্রথম সংসারের বড় ছেলেরও একটি ভিডিও ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে ঝর্ণার প্রথম সংসারে ফাটলের পেছনে মামুনুলকে অভিযুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে আলোচনা ওঠে সংসদেও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ওই নারী তার (মামুনুলের) স্ত্রী নন।’
এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মামুনুল ফেসবুকে একাধিক পোস্টে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারের ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ‘আমি অকপটে স্বীকার করছি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে চলমান পরিস্থিতিতে—স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা রিসোর্টে এভাবে অবস্থান করা সমীচীন হয়নি। কিন্তু আমি ভাবিনি যে এমন নিরাপদ জায়গাতেও কেউ এভাবে হামলা করতে পারে। যেখানে বিদেশি নাগরিকরাও অবস্থান করেন, সেখানে এভাবে হামলা হতে পারে তা আমি ভাবিনি’
‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি; সেজন্য নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি একাধিক বিয়ে করেছি। চার বিবাহ করায় কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা অনুৎসাহ নেই। এটা দেশের আইন এবং ইসলামী শরিয়াত, সবখানেই বৈধ। আমি যদি একাধিক বিবাহ করি, তাতে কার কী? এটা নিয়ে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তবে সেটি আমার স্ত্রীদের থাকতে পারে। আমার প্রথম স্ত্রী কি কোথাও, কারও কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেছে?’
জান্নাত আরা ঝর্ণার ছড়ানো ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে জোর করে পর্দা লঙ্ঘন করে ভিডিও করা হয়েছে। ওই ভিডিও আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত ফোনালাপও ফাঁস করা হয়েছে। এসব করে আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর চরমভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এটি দেশের প্রচলিত আইনেও গুরুতর অপরাধ।’
‘যারা এসব কাজ করেছে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আমি আমার আনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছি। যারা এসব কাজ করেছে, তারা যদি ক্ষমা না চায়, তাহলে আমি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ফোনালাপ থেকে কি প্রমাণিত হয়েছে যে, জান্নাত আরা ঝর্ণা আমার স্ত্রী নয়? অথবা জান্নাত আরা ঝর্ণা অন্য কারো স্ত্রী?’
জান্নাত আরা ঝর্ণার প্রথম সংসারের ছেলের ভিডিওর বিষয়ে মামুনুল হক দাবি করেন, ‘তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে, স্ক্রিপ্ট লিখে দিয়ে ভিডিও করতে বাধ্য করা হয়েছে।’
স্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীদের সঙ্গে আমি কী বলব, এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কোন কথা কাকে বলব, কাকে কী বলে প্রবোধ দেব, এটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’
‘সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে’ দাবি করে মামুনুল হক বলেন, ‘দুদিন আগে মাওলানা রফিকুল ইসলামকে (শিশুবক্তা) গ্রেফতার করে চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। পরিস্থিতি যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে কোনো সম্মানিত ব্যক্তি নিজের মান মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবেন না।’
উল্লেখ্য, ৩ এপ্রিলের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগে সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়েছে।