২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে শিল্প-কারখানা
👁️অনলাইন ডেস্ক✒️
ঈদুল আজহা সামনে রেখে চলমান লকডাউন শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গণপরিবহন চলাচল, দোকান-শপিংমল খুলে দেয়াসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।। ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে।
একই সঙ্গে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আর এই সময়ের মধ্যে বন্ধ থাকবে সব ধরনের শিল্প-কারখানা।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত আরোপিত সব বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। তবে, এ সময়ে সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্কাবস্থায় থাকা এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কভিড-১৯) সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩টি শর্ত সংযুক্ত করে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথাও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
যে ২৩ শর্তে কঠোর বিধিনিষেধ
১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. সব প্রকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. ব্যাংকিং/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
১০. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
২৩. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন বাজার কর্তৃপক্ষস্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট/প্রমাণক প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে য়োগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২৩. ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সাত দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আর আজ ঈদের মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত ও পরে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারির কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুলাই দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।