এরদোয়ানের বৈঠকে বিদেশি অতিথির চেয়ার না থাকা নিয়ে তুলকালাম!
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে ‘স্বৈরশাসক’ বলায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির ওপর চরম ক্ষেপেছে তুরস্ক। এ নিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ইতালীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
এই সমস্যার শুরু মূলত গত মঙ্গলবার এরদোয়ানের একটি বৈঠকে। সেদিন তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আঙ্কারায় দেখা করতে গিয়েছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভর ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল।
ইউরোপীয় এ দুই কর্মকর্তার কূটনৈতিক পদমর্যাদা সমান হলেও তাদের জন্য চেয়ার রাখা ছিল মাত্র একটি। ফলে এরদোয়ান ও মাইকেল পাশাপাশি চেয়ারে বসে পড়লে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ভন ডার লিয়েনকে। এর জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকেন তিনি।
সরকারি মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে অবশ্য পরে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুৎ কাভুসোগলুর বিপরীতে একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা গেছে উরসুলা ভন ডার লিয়েনকে।
এমন বিব্রতকর ঘটনার জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) সাবেক প্রধান মারিও দ্রাঘি।
গত বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আমি ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে এরদোয়ানের আচরণ একেবারেই মেনে নিতে পারছি না… আমার মনে হয় না এটি যথাযথ আচরণ ছিল। ভন ডার লিয়েনকে যে অপমান সহ্য করতে হয়েছে তার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
এরপরই সেই বোমা ফাটান ইতালির প্রধানমন্ত্রী। তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তবুও এগুলোর সঙ্গে, তারা যা সেটাই বলি – স্বৈরশাসক – যাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামত প্রকাশের সময় একজনকে অবশ্যই খোলামেলা হতে হবে।’
দ্রাঘির এই বক্তব্যে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আঙ্কারা। সেদিনই দেশটিতে নিযুক্ত ইতালীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পরে এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইতালীয় রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, দ্রাঘির বক্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চেতনাবিরোধী। এজন্য ইতালীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে তার ‘নির্লজ্জ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য’ প্রত্যাহার করা উচিত।
কাভুসোগলু আরও দাবি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ভন ডার লিয়েনকে চেয়ার না দেয়ার অভিযোগ একেবারেই ‘অন্যায়’। ইউরোপীয় জোটের দাবি এবং আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই বৈঠকে আসনবিন্যাস করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ‘অব্যবস্থাপনা’র জন্য তুরস্ককেই দোষারোপ করেছে। মাইকেল চেয়ার পাওয়ার পরেও ভন ডার লিয়েনকে কেন দাঁড়িয়ে থাকতে হলো, তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বেশ কয়েকটি গ্রুপ।
সূত্র: এপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান