২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার দেবীদ্বারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে বেদীতে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। আহতদের দেবীদ্বার ও চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে সোমবার মধ্যরাতে।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপির সমর্থকরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার সমর্থকদের শহীদ মিনারের বেদীমূলে আসতে প্রতিরোধ তৈরি করে রাখে।

তারা সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পথে পথে অবস্থান নেয়। রাত পৌনে ১টার দিকে রোশন আলী মাস্টার জেলা ও উপজেলার নবগঠিত কমিটির একাংশের নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারের দিকে রওয়ানা হলে-কলেজ রোডে প্রতিপক্ষের প্রতিরোধের মুখে পড়েন।

এসময় উভয় পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। প্রতিরোধ ভেঙে রোশন আলী মাস্টার ও তার সমর্থকদের পুলিশের সহযোগিতায় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

প্রতিপক্ষরা রোশন আলী মাস্টারের সমর্থকদের হাত থেকে আওয়ামী লীগ উপজেলা কমিটির নামে তৈরি পুষ্পস্তবকটি ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে দেয়। একই পাশের একাধিক ভবনের ছাদ থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে অন্তত ১০- ১২ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সামসুল হক, উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা সৈয়দ আলী মাস্টার, সমর্থক মো. আলী আশরাফ, শেখ মো. সাফিনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর মধ্যে সৈয়দ আলী মাস্টার মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পা ভাঙ্গা সামসুল হককে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আলী আশরাফ ও সাফিনকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম সফিকুল আলম কামাল বলেন, জেলা ও উপজেলা আওয়া লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে চান্দিনা রোডের মাথায় এমপি সমর্থকরা বাধা দেয়। এসময় এমপি সমর্থকরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রী নিয়ে হামলা চালায়।

অন্যদিকে এমপি সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরী ও প্রভাষক সাইফুল ইসলাম শামিম বলেন, আমাদের নেতৃত্বে রোশন আলী মাস্টার গ্রুপের উপর হামলার ঘটনা সত্য নয়।

পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জেলা কমিটি কর্তৃক স্থগিত করা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির ব্যানারে শহীদ মিনারে যেতে বাধা দেয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যা নিরসনে আমরা এগিয়ে গেছি।

এসময় বিক্ষুব্ধ পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের হামলায় ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, আমরা আগে থেকেই শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা নেতা-কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের আশংকা করেছিলাম। তাই শহীদ মিনার ঘিরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এমপি সাহেব ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে আগে ফুল দেয়ার আয়োজন করি এবং কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে এক ঘণ্টা পরে আসার অনুরোধ করি। কিন্ত পথিমধ্যে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হবে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চান্দিনা রোডের মাথায়ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখি। ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন আহত হওয়ার সংবাদ পেলেও বড়ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!