২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা চান্দিনায় ডাকাত আতঙ্ক পাহারায় রাত কাটাচ্ছে দুই গ্রামের মানুষ

নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লার চান্দিনায় হঠাৎ বেড়েছে ডাকাতের উপদ্রব। আজ এ বাড়িতে কাল ওই বাড়িতে। আবার কখনও সড়কে।

এমন ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কুটুম্বপুর ও মীরগঞ্জ গ্রামবাসীর। পুলিশ চিহ্নিত ডাকাত এবং ডাকাতচক্রকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে না পারায় গ্রামবাসীদের পাহারায় রাত কাটাচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস যাবৎ চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কুটুম্বপুর, মীরগঞ্জ, পাশ্ববর্তী দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সাহারপাড়, সূর্যপুর গ্রামের গৃহডাকাতি সংগঠিত হচ্ছে।

ওই চারটি গ্রাম পাশাপাশি হওয়ায় ডাকাতচক্র ২/৩ দিন পরপর ওই চারটি গ্রামে ধারাবাহিক ভাবে ডাকাতি করে মালামাল লুটে নিচ্ছে।

কখনও কখনও গৃহকর্তাদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক ভাবে আহত করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্চা লড়ছে। ডাকাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে ইতিমধ্যে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ করে।

চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের কুটুম্বপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির জানান, আমার ভাই এলাকার প্রতিষ্ঠিত গরু ব্যবসায়ী। ব্যবসার কারণে আমার ঘরে মোটামুটি টাকা রাখতে হয়।

গত ২৯ মে (রবিবার) রাত ২টায় ডাকাতদল ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে টাকা পয়সা লুটে নেয়। এসময় আমার ভাই সফিকুল ইসলাম বাঁধা দিলে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। আমার ভাই ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

একই গ্রামের সবুজ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাতে ডাকাতদল আমার ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে আমার সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।

মীরগঞ্জ গ্রামের হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহে আমাদের গ্রামের ২টি বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় পাহারায় কারণে ডাকাতি করতে পারেনি।

গত বুধবার (১ জুন) বুধবার মাধাইয়া বাজার থেকে এক ব্যবসায়ী বাড়ি ফেরার সময় তাকে আটক করে ডাকাতদল। তবে তার কাছে কিছু না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়।

মাধাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান জানান, ডাকাত আতঙ্কে এলাকার পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী। শনিবার (৪ জুন) বিকেলে কুটুম্বপুর গ্রামে আমরা সচেতনা সভা করি। ওই সভায় চান্দিনা থানা পুলিশও উপস্থিত ছিল।

ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুটুম্বপুর বাস স্টেশন এলাকার এক পাশে চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর, মীরগঞ্জ গ্রামে অপরপাশে দেবীদ্বার উপজেলার সাহারপাড়, সূর্যপুর ও খাদঘর গ্রামে। গত এক মাসে ওইসব এলাকায় অন্তত ৭-৮টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

সাহারপাড় গ্রামের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ জানান, গত শনিবার (২৮ জুন) রাতে সাহারপাড় আক্তারুজ্জামান খন্দকার বাড়িতে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাতদল।

গত এক মাসে ওই গ্রামের আরও ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত বুধবার (১ জুন) ডাকাতি রোধে মানববন্ধন করেছে কয়েক গ্রামের মানুষ।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সফিক এর বাড়িতে ডাকাতি নয়, ‘সেটি পূর্ব শত্রুতায় হামলা। সবুজ এর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা আমার জানা নেই। দুই গ্রামে এখন প্রতিরাত পাহারা দিচ্ছে’।

ডাকাতি যদি না-ই হয় তাহলে গ্রামের মানুষ রাতে পাহারার দিচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডাকাতি হলে তো কিছু নিতো। সফিক এর ঘর থেকে কিছু নেয়নি’।

তবে আহত সফিকুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ডাকাতদল প্রথমে আমার ভাইয়ের ঘরে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করে। আমার ভাইয়ের চিৎকার শুনে আমি ঘরের দরজা খুলতেই ডাকাতদল আমাকে ধরে ফেলে।

আমি ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা আমাকে কুপিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। আমার জ্ঞান ফিরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। আমার ঘরে আমি একাই থাকি। আর ব্যবসায়ীক কয়েক লাখ টাকা আমার ঘরে ছিল। ঘর থেকে কি কি লুটে নিয়েছে আমি কিছুই বলতে পারবো না।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!