গাড়ি থাকলে স্ত্রীর সম্পদের তথ্যও দিতে হবে
নিউজ ডেস্ক।।
আয়কর কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক বিত্তবান আছেন, যাদের জীবনযাপন তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্ত্রী বা সন্তানদের নামে তারা সম্পদ লুকিয়ে রাখেন। এ কারণে কারো ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে তাকে স্ত্রীর সম্পদের হিসাবও দিতে হবে।
সম্পদ বা আয়ের তথ্য গোপন করার সুযোগ বন্ধ করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ নিয়ম অনুযায়ী, কারো ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে আয়কর রিটার্নে ব্যক্তির নিজের সম্পদের পাশাপাশি স্ত্রীর সম্পদের হিসাবও দিতে হবে।
রোববার এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক বিত্তবান আছেন, যাদের জীবনযাপন তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্ত্রী বা সন্তানদের নামে তারা সম্পদ লুকিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ আছে।
ফলে করদাতা ও তার পরিবারের প্রকৃত সম্পদ কত, তা জানতে পারেন না কর কর্মকর্তারা। এভাবে আয় বা সম্পদ লুকিয়ে রেখে কর ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।
কর ফাঁকি বন্ধে এখন থেকে কোনো ব্যক্তির গাড়ি থাকলে বার্ষিক আয়কর রিটার্নের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পদের তথ্যও বাধ্যতামূলক উল্লেখ করতে হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
নিয়ম অনুযায়ী, বিত্তবান করদাতাদের আয়কর রিটার্নের সাথে সম্পদের বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, সম্পদ বিবরণী কাদের দাখিল করতে হবে, সে সম্পর্কে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন, করদাতার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে, একটি মোটরগাড়ির মালিক হলে কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ-সম্পত্তিতে বিনিয়োগ বা অ্যাপার্টমেন্ট থাকলেই সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে।
এনবিআর বলেছে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি বিত্তবান করদাতাদের নিজের নামের পাশাপাশি স্ত্রীর নামে কোথায় কী সম্পদ আছে, তা জানিয়ে বিবরণীও জমা দিতে হবে।
এর জন্য এনবিআরের নির্ধারিত পৃথক একটি ফরম আছে, যা আইটি ১০-বি নামে পরিচিত। সেখানে করদাতার স্ত্রীর সম্পদের তথ্যের পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষার খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, সামাজিক অনুষ্ঠান, উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের তথ্যও দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, এক শ্রেণির করদাতা নিজেদের সম্পদ স্ত্রী বা সন্তানদের নামে রেখে দেন। অনেক সময় আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় তারা এমনটি করে থাকেন বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
প্রতি বছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ)। এর মানে প্রতি বছর গাড়িওয়ালার সংখ্যা বাড়ছে। সে জন্য এনবিআর বিআরটিএ-এর সার্ভার ব্যবহার করে গাড়ি নিবন্ধনের তথ্য জানতে পারবে।
কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ছাড়া গাড়ি নিবন্ধন নেয়া যায় না। তাই কোন টিআইএনধারী গাড়ি কিনেছেন, তা সহজেই বের করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা।
এই সূত্র ধরে কোনো গাড়িওয়ালা পরিবারের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন কি না, তা সহজেই জানতে পারবেন কর্মকর্তারা।
এনবিআরের আয়কর বিভাগ আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে করদাতার তথ্য ডিজিটাল উপায়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি নয় এমন করদাতারা শুধু বাংলাদেশের স্থাবর সম্পদের বিবরণী দাখিল করবেন।
আর বার্ষিক করযোগ্য আয় ৪ লাখ টাকার বেশি, এমন করদাতাদের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত ব্যয় বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হবে।