৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিনের চশমা পড়োনা; পাশে থাকো বন্ধু ।

কোভিডের কারণে পৃথিবী বদলে গেছে। দুনিয়ার হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে সব দেশে মানুষ আজ অসহায় আর বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশও তার বাইরে না। ভারত আমাদের চেয়ে আয়তনে জনসংখ্যায় আর চিকিৎসা সেবায় অগ্রসর একটি দেশ। করোনার আগে দলে দলে বাংলাদেশীরা যেতেন ভারতে চিকিৎসা করতে সেবার প্রতি ছিল দেখার মতো। সে ভারত আজ চরম বিপদে। সারা ভারতই নাজুক অবস্থায়। সেখানে বিস্তীর্ণ সীমান্ত থাকার পরও বাংলাদেশ আছে মোটামুটি ভালো জায়গায় । যদিও করোনাভাইরাসের টেস্ট কী পরিমাণ হচ্ছে আর কী তার ফলাফল এসব নিয়ে সন্দেহ আছে।করোনার কারণে ভয় ভীতি ও সমগ্র পরিবেশ মিলে বড্ড বিপদে আছেন নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন তো, আপনি কি আপনার বাসায় পড়াতে আসা মাস্টারের খবর নিয়েছেন একবারও? বহুততো লাফালাফি করে ছিলেন কোচিং বন্ধ করার জন্য? একবার কি ভেবেছেন এইসব পড়ুয়া শিক্ষকরা কি করে? টুল-টেবিল বিক্রি করেও বাসাভাড়া শেষ হয়না। অনেকে দেওলিয়া হয়ে গেছে। মেসভাড়া পর্যন্ত দিতে পারে না। আপনি কি জানেন মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ চাকরিজীবীর খবর কী?

আমরা যা শুনছি,জানছি বা দেখছি, তাতে এটা স্পষ্ট একেবারে গরীব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী কিছুটা হলেও সাহায্য পেয়েছেন, এখনো পাচ্ছেন। যারা প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ তাদের জীবনে মান-অপমানের কোন জায়গা নাই। তাদের কাছে সবার চেয়ে বড় পেটের খিদে। তাই তারা যেখানে ইচ্ছে লাইন দিতে পারেন এবং সাহায্য সংগ্রহ করতে পারেন।

কিন্তু নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তা পারেন না। না পারার কারণ তাদের সামাজিক মর্যাদা ও লজ্জা। আপনি একবার ভাবুনতো সংবাদকর্মী তাদের কি হাল? দেশে প্রিন্ট মিডিয়ার বড় খারাপ অবস্থা এখন। করোনার সময় নিউজপ্রিন্ট বা পেপার হাতে ধরলেও নাকি ভাইরাস ছড়াতে পারে! হু হু করে নিচে নেমে গেল পত্রিকার সার্কুলেশন।

সে কাগজগুলোর সাংবাদিকরা কি আগের বেতন পান? তাদের কতজনের চাকরি আছে? একবার ভাবুনতো গার্মেন্টসের চাকুরীচুৎ মানুষদের কথা? এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আজ অনেকগুলো খাত। তাদের নিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের কী ভাবনা- সেটা জানা যায় না।

প্রচার প্রচারণা চলছে হরহামেশা উন্নয়নশীল দেশে। সেটা সত্য বলে ধরে নিলেও বলতে হয়, তাহলে কেন এসব মানুষরা সরকারের অনুদান বা সাহায্য পাবেন না? কে দেবে সাহায্য? জানি বাংলাদেশে এটা অসম্ভব। কিন্তু তালিকা করে সেসব চাকরি হারানো পরিবার পরিজন নিয়ে কঠিন সময় পার করা মানুষকে কি সাহায্য করা আসলেই অসম্ভব?

এতো যে টিভি মিডিয়া- দিনরাত টকশো- এতো এতো অনুষ্ঠান, দেখলে মনে হবে করোনাভাইরাস মানে আন্তর্জালে প্রতিভা প্রকাশের উৎসব চলছে। গান-নাচ-কবিতা-টক শো এবং সব বিষয়ে এতো আলোচনা, এতো সমাধান- অথচ করোনায় নিঃস্ব হওয়া মানুষদের জন্য কোনও ভাবনা নাই। এসব উটকো সমস্যার চাইতে বড় যে মানুষ এবং তার জীবন- সেটাই আজ ভুলে গেছি আমরা।

আমাদের দেশে ধনীর সংখ্যা আর তাদের টাকার পরিমান সম্পদের পরিমান মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। উন্নত বা ধনীদেশের মানুষজন ও এখন বাংলাদেশীদের তুলনায় ফকির। সম্পদের এ অসাম্য বণ্টন বা ভাগের কিয়দংশ থেকে করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের ভয়াবহতায় ধুঁকতে থাকা পরিবারগুলোকে সাহায্য করা যেত। এখনো যায় ।

কথায় কথায় বঙ্গবন্ধু ও তার স্বপ্নের কথা বললেও, কেউ তার পথ অনুসরণ করে না। বঙ্গবন্ধুর মতো সহজ জীবন, সরল চিন্তা বা সাধারণ পোশাকও নাই তাদের।

সমাজের সর্বত্র খাই খাই ভাবের ভেতর এককোণে চুপ থাকা মধ্যবিত্ত, নিম্ম মধ্যবিত্ত আর জীবিকা নিয়ে সংকটে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়ান। মহামারী সহজে যাবার নয়। মানুষ না থাকলে, আর মানুষ ভালো না থাকলে-কী হবে উন্নয়নে।

আর তাই বলতে হয়…
মানুষ বড্ড অসহায়,
মানুষ কাঁদছে,
পাশে দাঁড়াও বন্ধু।।
সৈয়দ বদরুদ্দোজা টিপু।।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!