২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নামাজের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক।।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। এর মধ্যে একটি হলো নামাজ। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। নামাজ হল মুনাজাত বা চুপিচুপি কথা বলা। মুমিন বান্দা আল্লাহর সঙ্গে ভাববিনিময় করেন এ নামাজের মাধ্যমে। নামাজী বান্দাকে আল্লাহ বিভিন্ন পুরস্কৃত করে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেকেই অতিরিক্ত নামাজও আদায় করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, নামাজ পড়ার মাধ্যমে শরীরের বেশকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয় যা এক প্রকার ব্যায়াম। এই ব্যায়াম স্বাস্থ্যের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য অনেক উপকারি।

এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,

একজন মুসলমান ও একজন কাফেরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী হলো নামাজ। (মুসলিম) সুতরাং মুসলমান হিসেবে নামাজ আদায় আমাদের সকলের আবশ্যিক কর্তব্য। এখানে নামাজের পাঁচ উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

১. নামাজের মাধ্যমে আত্ম উপলব্ধি ও অন্তরের শান্তি অর্জন

প্রত্যেক জীবিত আত্মারই আধ্যাত্মিক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণ না হলে কোনো ব্যক্তিই অন্তরে শান্তি লাভ করতে পারেনা।

নামাজের মাধ্যমে ব্যক্তি তার স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। এর ফলে আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে একদিকে যেমন সে অন্তরের শান্তি অর্জন করে, অপরদিকে নিজের সত্ত্বা ও অস্তিত্ব সম্পর্কে যথাযথ উপলব্ধি করতে পারে।

হযরত আবু মুসা আল-আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি তার প্রভুকে স্মরণ করে এবং যে ব্যক্তি তার প্রভুকে স্মরণ করেনা, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে জীবিত ও মৃতের মধ্যে যে পার্থক্য।” (বুখারী ও মুসলিম)

২. দাসত্ব থেকে মুক্তি দানকারী নামাজ

নামাজ মানুষকে বস্তুজগতের সকল প্রকার দাসত্ব ও বন্দীত্ব থেকে মুক্তি দান করে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, “আসল বন্দী সে যার অন্তর তার প্রভুর জন্য বন্ধ থাকে এবং আসল দাস সে ব্যক্তি যার অন্তর তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার দাস।” নামাজের মাধ্যমে ব্যক্তি এই বন্দীত্ব ও দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে।

৩. নৈতিকতার মূলভিত্তি রয়েছে নামাজের মধ্যে

নামাজ একজন ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। কোনো ব্যক্তি যদি যথাযথ নামাজ আদায় করে, তবে নৈতিক গুণাবলী তার মাঝে সহজেই বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

৪. ঈমানের নবায়নকারী

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে দৈনিক পাঁচবার আমরা স্মরণ করি, আমরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বান্দা। আর সকল পরিচয়ের উপরে এটিই আমাদের পরিচয়। সুতরাং, নামাজের মাধ্যমে আমাদের ঈমানকে আমরা প্রতিনিয়তই নবায়ন করে নিই।

৫. একতার ধারণা

নামাজের জামায়াতে ধনী-গরিব, সাদা-কালো একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। কোনো প্রকার বৈষম্যের ধারণা নামাজের জামায়াতে কাজ করেনা। সকলেই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে নামাজ আদায় করে।

জামায়াতে নামাজের এই ব্যবস্থা থেকে আমরা একতার ধারণা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা অর্জন করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলের জন্য নামাজ আদায়কে সহজ করে দিন।

নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত। দিনের ২৪ ঘণ্টার পাঁচটি সময়ে নামাজ আদায় করা হয়। এই সময়ের ভেদে নামাজ কিভাবে স্বাস্থ্যের উপকারে আসে তা আজ জানবো।

ফজরের সময়

ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারারাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজির অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়।

এ সময়ে দেহ পরিষ্কার, দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও পেশাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। তেমনি নামাজিরা হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফলে হালকা ব্যবহার হয়ে থাকে তা স্বাস্থ্যের খুবই উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও বাঁচা যায়।

জোহরের সময়

মানুষ জীবিকার জন্য সকাল থেকেই বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল দেহে লেগে শরীরে জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়া সূর্য ঢলে পড়ার সময় গরমের কারণে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে মানবদেহে প্রভাব ফেললে বিভিন্ন রোগও হতে পারে। তাই জোহরের সময় ওযু করলে অনেক জীবাণু দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ তরতাজা হয়। নামাজ আদায়ের ফলে এ গ্যাস শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়।

আসরের সময়

পৃথিবী বৃত্তীয় ও লম্ব দুই ধরনের গতিতে চলে। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে ও প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতি, মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে যায়। সুর্যের রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।

মাগরিবের সময়

সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে কাটায়। মাগরিবের সময় ওযু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। সারাদিনের ময়লা ওযুর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে ত্বক হয় তরতাজা।

এশার সময়

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে হাল্কা ব্যায়াম করে নিলে তা স্বাস্থের জন্য ভাল। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপকারি এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর করে।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!