২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের নির্মাণাধীন প্যাণ্ডেল-মঞ্চ

নিউজ ডেস্ক।।
২৬ বছর পর সম্মেলনের জন্য প্যাণ্ডেল-মঞ্চ নির্মান করা হলেও অবশেষে হচ্ছে না দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন।

দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় পর ২১ জুলাই আ.লীগ দেবীদ্বার উপজেলা সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও, এমপি-চেয়ারম্যানের কিল-ঘুষিতে তা স্থগিত করে দিলেন কেন্দ্রীয় কমিটি।

১০ হাজার লোকের সমাগম হবে বলে সম্মেলনকে ঘিরে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মানের কাজ চলছি।

হঠাৎ সম্মেলন স্থগিতের কারনে রোববার বিকেল থেকে আবার প্যান্ডেলের সমস্ত আয়োজন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা খুলে নিতে দেখা যায়। সম্মেলন স্থগিত করায় দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এলডি হলে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় এমপি- উপজেলা চেয়ারম্যানের কিল ঘুষাঘুষি মারামারির রেশ ধরে ওই সিন্ধান্ত নেয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামীলীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ মোঃ হুমায়ুন কবির।

রোববার জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ চট্রগ্রাম বিভাগীয় দায়ীত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির সাথে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরী বৈঠক মিলিত হন। বৈঠকে আগামী ২১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করে ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভা ডাকা হয়।

এমপি- উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধের ওই ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চেয়ারম্যান সমর্থক ও এমপি সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় একজন এএসপির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপজেলা সদরে দিনব্যপী টহলে থাকতে দেখা যায়।

দোকানপাটে লোক সমাগমও খুব কম ছিল। পরিস্থিতি থমথমে দেখা যায়। তবে কোন পক্ষকেই মিছিল মিটিং করতে দেখা যায়নি।

এব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, গত রাতের ঘটনায় কোন পক্ষই রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত কোন পক্ষই মামলা করেনি।

দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগ এর আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে ২৬ বছরেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ২টি পূর্ণঙ্গ কমিটি দ্বারা এবং মাঝে মাঝে আহবায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে দলটি।

১৯৮৫ সালে দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সাবেক প্রাদেশীক পরিষদ সদস্য ও বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুল আজিজখান আলী আশরাফ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও এডভোকেট জানে আলমকে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করে যান।

পরবর্ততে ১৯৯১ সালে অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ সভাপতি ও আব্দুল মতিন মূন্সীকে সাধারন সম্পাদক করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। তখন আলহাজ জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি ও একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।

সর্বশেষ গঠিত এই কমিটির ৫১ সদস্যের মধ্যে গত ২৬ বছরে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক, সদস্যসহ বিভিন্ন পদের ১৪ মারা গেছেন। ২ জন বিএনপিতে যোগদান করেছেন।

১৩ জনকে কেউ চেনেনা (ওরা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী ও দেশের অভ্যন্তরে নিরুদ্দেশ রয়েছেন)। ১৫ জন নিস্ক্রীয় এবং ৭জন সক্রিয়-আধা সক্রিয় রয়েছেন।

অবশেষে গত ২৩ মে জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এলডি হলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মামুন এমপির উপস্থিতিতে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সাংগঠনিক সভায় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।

অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ, কেন্দ্রীয় আ’লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সবুর আহমেদ ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

এছাড়া সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন। ওই দিন ২ জুলাই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে অপর একটি বৈঠকে ২ জুলাই থেকে পরিবর্তন করে ২১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

গত শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এলডি হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর মধ্যে অনাকাঙ্খীত মারামারির ঘটনায় রোববার এক জরুরী বৈঠকে উপজেলা সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

২০০৮ সালে সাবেক মন্ত্রী, সচিব ও জাতীয় পার্টির ‘নাজিউর রহমান মঞ্জু- এবিএম গোলাম মোস্তফা’ গ্রুপ থেকে এবিএম গোলাম মোস্তফাকে এনে নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচন করার পর দেবীদ্বার আ’লীগ ঘুরে দাড়াতে সক্ষম হন কিন্তু ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মামা-ভাগ্নের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

মামা সাবেক মন্ত্রী ও আ’লীগ মনোনীত এমপি এবিএম গোলাম মোস্তফা বনাম ভাগ্নে সাবেক উপ-মন্ত্রী ও এমপি এ,এফ,এম ফখরুল ইসলাম মূন্সীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই দুই গ্রুপের বাহিরেও কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক হাজী রোশন আলী মাষ্টার, কুমিল্লা (উঃ) জেলার সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ এর উপদলে বিভক্ত ছিল।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাগ্নে জাপার সাবেক উপ-মন্ত্রী ও এমপি এবং আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এ,এফ,এম ফখরুল ইসলাম মূন্সী নৌকার প্রার্থীর বাহিরে নিজ পুত্র রাজী মোঃ ফখরুলকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করেন। সেখান থেকেই দলীয় আভ্যন্তরীন দ্বন্দ শুরু হয়। যা আজও অব্যাহত আছে।

উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টার এমপি সাহেবেরে বরাত দিয়ে বলেন, গত শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এলডি হলে এমপি- চেয়ারম্যনের অনাকাঙ্খীত ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!