২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাটিবাহী ড্রামট্রাকের চাপায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় চালক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার তুতবাগান এলাকায় মাটিবাহী ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির চালকসহ ৫ জনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক ট্রাক চালক রাকিবুল হাসান রবিন(১৯)কে সদর দক্ষিন থানা এলাকা থেকে র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ কর্তৃক গ্রেফতার।সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।

এ প্রেক্ষিতে র‍্যাব অতিদ্রুততার সাথে জড়িত ঘাতক পরিবহন চালক ও হেলপারদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ ভোর ০৬:০০ ঘটিকার সময় কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের তুতবাগান নামক স্থানে নাম্বারবিহীন মাটিবাহী ড্রামট্রাক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি যাত্রীবাহি সিএনজিকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলে সিএনজি চালকসহ ঘটনাস্থলেই পাঁচজন যাত্রী নিহত হয়।

এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে প্রাথমিক সিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর একটি হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে। দূর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার সাদকপুর গ্রামের মৃত ছাফর আলীর ছেলে মোঃ জুলহাস মিয়া(৬০); একই গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে জহিরুল ইসলাম(৩৫); কংশনগর গ্রামের দৌলত খানের ছেলে মোঃ জালাল(৩৭); আবদুল মতিনের ছেলে মোঃ আলমগীর(২৭); দেবিদ্বার থানার ছগুরা গ্রামের মোঃ ফরিদ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম(৩৩)।

উক্ত দূর্ঘঘটনায় আহত কাঁচামাল ব্যবসায়ী বুড়িচং থানার রামপুর গ্রামের খোরশেদ আলম (৬০) বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দূর্ঘটনা পরবর্তীতে ঘাতক ড্রাইভার ড্রামট্রাকটি রেখে পালিয়ে যায়।

উক্ত দূর্ঘটনায় নিহত সিএনজি চালক মোঃ জুলহাস মিয়ার পরিবারের সদস্য বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-২২ তারিখ ১৮/০২/২০২২ইং।

এরই প্রেক্ষিতে র‍্যাব একটি ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর আভিযানিক দল ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার গলিয়ারা দক্ষিন ইউনিয়নের মুরাপাড়া গ্রাম হতে সিএনজি যোগে পালানোর সময় ঘাতক ড্রামট্রাকটির চালক রাকিবুল হাসান রবিন(১৯), পিতা-মোঃ খোরশেদ আলম, গ্রাম-মিরপুর, থানা-বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী বর্ণিত সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন(১৯) জানায় সে ৫ম শ্রেণী পাশ একজন বালক। তার পিতা একজন সিএনজি চালক এবং তার চাচা একজন ড্রামট্রাক চালক। ছোটবেলা থেকেই তার বাবা এবং চাচার ড্রাইভিং করা দেখে তার মনেও ড্রাইভিং করার ইচ্ছা জাগে। এরই প্রেক্ষিতে সে তার বাবার সাথে সিএনজি চালানোর মাধ্যমে ড্রাইভিং পেশা শুরু করে। ২/৩ বছর পূর্বে তার চাচার সাথে ড্রামট্রাক এর হেলপারি শুরু করে।

পরবর্তীতে ড্রামট্রাকের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে তার ওস্তাদ মোঃ মনির(৩০) এর সাথে গাড়ি চালায়। গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন(১৯) এর কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা কোন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর কোন প্রশিক্ষন ছিলনা। পরবর্তীতে সে ওস্তাদের বুদ্ধিতে সমাজতার মাধ্যমে অল্প টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মালিকের ড্রামট্রাট চালানো শুরু করে।

দূর্ঘটনার পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন(১৯) তুতবাগান রাস্তার পাশে অপর একটি ড্রামট্রাকে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মালিককে ফোন করে দূর্ঘটনার বিষয়টি জানায়।

পরবর্তীতে সে ময়নামতি হাসপাতালে সকাল ০৭:০০ ঘটিকার সময় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গোপনে কুচাইতলী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসা শেষে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার
কনেশতলা গ্রামে আত্মগোপনে চলে যায়।

মালিক মোঃ আলেক(৫৫) তাকে নূন্যতম ০১ বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে সে প্রথমে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার কনেশতলা গ্রাম আত্মগোপনে যায়।

পরবর্তীতে রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আচ করতে পেরে ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে সিএনজি যোগে পালানোর সময় র‍্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন(১৯) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ রাত ২০:০০ ঘটিকা হতে সারারাত ড্রামট্রাকটি করে মাটি ভর্তি করে কুমিল্লা জেলার দেবপুর থেকে ঘোষনগরে সে একাধিক ট্রিপ মারে এবং প্রতিটি ট্রিপের উপর তার অধিক কমিশন রয়েছে।

অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতো। আনুমানিক ০৫:৩০ ঘটিকায় দেবপুর থেকে ঘোষনগরের উদ্দেশ্যে মাটি বোঝাই ড্রামট্রাকটি নিয়ে সে রওনা করে। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক রাকিবুল হাসান রবিন(১৯) দ্রুত ট্রিপ মারার জন্য বেপরোয়া গতিতে ড্রামট্রাকটি চালাচ্ছিল।

অধিক কুয়াশা, সারারাত ক্লান্তিহীন গাড়ি চালানো ও অতিরিক্ত গতির কারণে তুতবাগান এলাকায় যাত্রীবাহি সিএনজি চালক মোঃ জুলহাস মিয়া(৬০)কে দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারেনি। গাড়ীর অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্র্ত্রণ না করতে পেরে দূর্ঘটনাটি সংঘটিত করে। সে আরও জানায়, গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৫০ ফুটের মতো সামনে চলে যায়। পরবর্তীতে সে স্থানীয় লোকজনের ভয়ে তার চালানো দূর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটি রেখে পিছনে থাকা অন্য আরেকটি ড্রামট্রাকে উঠে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।

ঘটনার পর থেকেই দূর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটির মালিক মোঃ আলেক(৫৫), গ্রাম-মিরপুর, থানা বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লা আত্মগোপনে রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে র‍্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!