২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর

নিউজ ডেস্ক
নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাত ১১টায় সিলেটের বাদাঘাটস্থ নতুন এই কারাগারে ঢাকার কাশিমপুর কারাগার থেকে আসা জল্লাদ শাহজাহান লিভার টেনে হবিগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম সিরাজের (৫৫) ফাঁসির রায় কার্যকর করেন।

হবিগঞ্জের রাজনগরের কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ২০০৪ সালের ৬ মার্চ স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে শাবল ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর ৩ মাস পর স্বামী সিরাজের ফাঁসি কার্যকর করা হলো। তিনি হবিগঞ্জ জেলার রাজনগর কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এই ফাঁসির কার্যকর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আশপাশ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে তার আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সিরাজের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

জানা গেছে, সিলেটে ফাঁসির রায় কার্যকরকারী জল্লাদ মো. শাহজাহান এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আহসান মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করেছিলেন। সেই জল্লাদ শাহজাহানকে গত সোমবার (১৪ জুন) বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাশিমপুর কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে (প্রথম) নিয়ে আসা হয়।

কারা সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসি কার্যকর করার আগে সিরাজের ইচ্ছে অনুযায়ী তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে সিরাজ খুব শান্তভাবে হেটে ফাঁসির মঞ্চে যান। কারা রীতি অনুযায়ী ফাঁসির মঞ্চে তোলার আগে রাত ৯টায় সিরাজকে গোসল করানো হয়। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তাকে তওবা পড়ান কারাগার জামে মসজিদের ইমাম।

কারাগার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছ, ২০০৪ সালে ৬ মার্চ পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে শাবল ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ থানায় ২০০৪ সালের ৭ মার্চ হবিগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা (নং-৫) রুজু করেন নিহতের ভাই।

মামলার দীর্ঘ শুনানির পর ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক সিরাজের ফাঁসির রায় দেন। একই সঙ্গে ওই রায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন সিরাজ। নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টেও বহাল থাকে। পরে ডেথ রেফারেন্সের (নং-১৮/০৭) আলোকে ২০১২ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট সিরাজের জেল আপিল নিষ্পত্তি করে সিলেটের আদালতের রায়ই বহাল রাখেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জেল পিটিশন (নং-২৬/১২) দাখিল করেন। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রায়ে সিরাজের আপিল বাতিল করে ডেথ রেফারেন্সের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।

এরপর সিরাজ চলতি বছরের মে মাসে নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। গত ২৫ মে রাষ্ট্রপতি তার আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ১৭৮৯ সালে সিলেটের ধোপাদিঘীর পাড়ে নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় নতুন কারাগারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাটে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর নতুন কারাগারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারাগার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ হিসেবে পরিচয় পায়। পুরনো কারাগারের পরিচয় হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ হিসেবে। নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনের আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবার রাতে এ কারাগারে প্রথমবার ফাঁসি কার্যকর হয়। রায় কার্যকরের পর মেডিকেল পরীক্ষা শেষে গভীর রাতেই নিহতের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!