২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহর ও শহরতলির একাধিক এলাকায় টানা ৭ ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাঁটুপানি জমেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকাসহ শহরতলির বিভিন্ন এলাকা এখন পানির নিচে। শুক্রবার বিকেলে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।

পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের অভিযোগ, এলাকার খাল, ও নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পানি নামার পরিবর্তে উল্টো এলাকায় ঢুকে পড়ে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা হয়।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এ কারণে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। শহরের কুমারশীল মোড়ে এক দোকানে উঠে আসে বৃষ্টির পানি। দোকানদার হাফিস মিয়া বলেন, ‘কিসের উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। মুখের বুলি দিয়ে শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে পারছে না পৌরসভা।’

অন্যদিকে শহরের কাউতলী স্টেডিয়ামের পাশে প্রাইভেট পড়িয়ে হাঁটুপানি পেরিয়ে নাতিকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন দাদা মহসিন । দাদার এক হাত ধরে হাঁটুপানি পেরিয়ে বাড়িতে যাওয়া আট বছরের সোহেল ঠান্ডায় কাঁপছিল।

দাদা মহসিন বলেন, ‘কতলা ফানি দেখছুইননি। এইখানো কোনো সময় অতলা ফানি হইতে দেখছি না। আবুইদ্দার কোমর পানি হইয়া গেছে। ড্রেন দিয়া না নামলে কমবো কেমনে। সহাল থেইক্কা বৃষ্টু পড়তেছে।’

কাউতলী এলাকার স্টেডিয়াম মার্কেটের বাইক ম্যাকানিক আকাশ বলেন, ‘আমি এই দোকানো কাজ করতাছি সাত বছর। আর এই সাত বছরে এ রাস্তাত কোনো সম পানি ওঠতে দেহি নাই।

আজকে সহাল থেইক্কা বৃষ্টি পড়তাছে। পানি তো জমবই। যেহান দিয়া পানি বাইরুইব সেখান দিয়া তো বন্ধ হইয়া রইসে দেহেন গা। ড্রেনডির মুখটি ছুডাই দিলে পানি সইরা যাইবোগা। ড্রেনইত বালা না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল এবং অপরিকল্পিত হয়ে আছে এমনটাই মনে করেন নোঙর জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খালগুলো এখন নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তা ছাড়া এই খালের স্লুইসগেটগুলো বন্ধ রয়েছে, যে কারণে পানি খালে যাচ্ছে না।

‘আর খালে যদি পানি না যায় তাহলে নদীতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শুধু তা-ই নয়, শহরের প্রত্যেকটি ট্রেন বন্ধ হয়ে রয়েছে। ড্রেনগুলো সরু ও অপরিকল্পিত। যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্যায় কবলিত হয়, তাহলে পানি দ্রুত নেমে আসার সুযোগ নেই। তাই কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দরকার বলে মনে করেন জেলা দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে। তবে দীর্ঘ সময় বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যে পানি জমেছে সেটি জলাবদ্ধতা। রাস্তা নামার যে বিষয়গুলো রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলো খুলে দিলেই পানি সরে যাবে।’

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী আ. কুদ্দুস বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা আটকে থাকা ড্রেনের মুখগুলো পরিষ্কারের জন্য লোক রয়েছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর পানি সরে যাবে।’

আরো দেখুন
error: Content is protected !!