২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পড়তে হবে কাজা নামাজ

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক।।
ফিকহ শাস্ত্রের প্রধান ও প্রসিদ্ধ সব ইমাম এই বিষয়ে একমত যে কোনো ব্যক্তির নামাজ কাজা হলে তথা ছুটে গেলে পরবর্তীতে তা আদায় করতে হবে।

কেউ সুযোগ থাকার পরও যদি কাজা নামাজ আদায় না করে, তবে পরকালে তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। এই বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের দলিলগুলো নিম্নরূপ।

কোরআনের নির্দেশ : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনদের ওপর নামাজ অপরিহার্য, যার সময়সীমা নির্ধারিত। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩)

উল্লিখিত আয়াতে প্রত্যেক নামাজের জন্য বিশেষ সময় নির্ধারনের বিষয়টি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই নামাজ কাজা করার বিষয়টিও পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহর ঋণ আদায় করতে হয় : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা একদা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা পূর্ণ করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?)

রাসুল (সা.) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ কোরো। বোলো তো যদি তোমার মা কারো নিকটে ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করে দিতে? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। তখন নবীজি (সা.) বললেন, তবে তোমর আল্লাহর ঋণ ও পরিশোধ কোরো। কেননা তিনি তাঁর প্রাপ্য পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। ’(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৫২)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যে আমল বান্দার ওপর ফরজ তা বান্দার ওপর আল্লাহর পাওনা বা ঋণ। এই ঋণ থেকে দায়মুক্তির একমাত্র পথ হলো তা আদায় করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল : রাসুল (সা.)-এর হাদিস, আমল ও সাহাবিদের অনুসৃত পদ্ধতি দ্বারাও প্রতীয়মান হয় যে, কোনো কারণে কেউ সময় মতো নামাজ পড়তে না পারলে পরবর্তীতে তা কাজা করে নিতে হবে। নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো—

১. খন্দকের যুদ্ধে শত্রুবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকার কারণে রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে যায়। রাতে ছুটে যাওয়া সেই নামাজ তাঁরা আদায় করেন। (সহিহ বুখারি : ১/৮৩; সহিহ মুসলিম : ১/২২৬)

২. একরাতে নবীজি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে সফর বিরতি দিলেন। বেলালকে (রা.) ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব দিলেন। এরপর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু বেলাল (রা.)-ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। ফলে সবার নামাজ কাজা হয়ে গেল। সূর্যের কিরণ নবীজি (সা.)-এর দেহ মোবারকে পড়তেই তিনি জাগ্রত হয়ে গেলেন অতঃপর সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৭)

উল্লিখিত হাদিসদ্বয় থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল কোনো কারণে সময়ের ভেতর নামাজ পড়তে না পারলে সে নামাজ অবশ্যই কাযা করতে হবে।

৩. একইভাবে নবীজি (সা.) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হলো, যখন তার নামাজের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৭)

উম্মতের ইজমা : মুসলিম উম্মাহর সকল বরেণ্য মুজতাহিদ ইমাম এই ব্যাপারে একমত যে ফরজ নামাজ নির্ধরিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে তা কাজা করা অবশ্যক। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সকল আলেমরা এ কথার ওপর ঐক্যমত পোষণ করেন যে, জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাযা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি : ১/১৭৮)

শাফেয়ি মাজহাবের প্রসদ্ধি আলেম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) হলেন, ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা করা বিষয়ে সকল ফকিহ একমত পোষণ করেন। (রহমতুল উম্মাহ, পৃষ্ঠা ৪৬)

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যদি কারো দায়িত্বে কাজা নামাজের পরিমাণ অনেক বেশি হয় তবে সুন্নাত নামাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে ছুটে যাওয়া ফরজ নামাজসমূহের কাজা করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া : ২২/১০৪)

লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল কারীম, হালিশহর, চট্টগ্রাম।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!