৫ কিলোমিটার হেঁটে পদ্মার দুর্গম চরে সন্তান জন্ম দিলেন সুরমা
নিউজ ডেস্ক
ঈদে ঘরে ফেরার সময় ৫ কিলোমিটার হেঁটে পদ্মার দুর্গম চরে সন্তান জন্ম দিলেন সুরমা। মায়ের কোলে সদ্য ভূমিষ্ট ‘পদ্মা’, সঙ্গে বাবা মো. নহিদ মিয়া।
শরীয়তপুরের জাজিরার উপজেলার পদ্মা নদীর চর মাঝিকান্দিতে ঈদে ঘরে ফেরা এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। রবিবার (৯ মে) বিকালে সে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন।
পরিবার নিয়ে ঢাকার লালবাগে থাকেন মো. নহিদ মিয়া ও সুরমা আক্তার দম্পত্তি। সুরমার গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলিতে যাবেন ঈদ করতে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ, পদ্মা পাড়ি দেওয়ার নৌযানও চলে না। কোন রকম একটি ট্রলারে করে নদী পাড় হয়ে জাজিরার পদ্মা নদীর চরে নামেন। সেখানে পাঁচ কিলোমিটার পাঁয়ে হাটার পর প্রসব বেদনা ওঠে। তখন চরের একটি বাড়িতে নেওয়া হয় সুরমাকে। বিকাল ৫ টার দিকে কন্যা সন্তান জন্ম দেন ওই নারী। তখন আনন্দে মেতে ওঠেন ওই নারীর স্বজন ও মাঝিকান্দি গ্রামের মানুষেরা।
সন্তান প্রসবের পর ওই নারীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা নাজুক হলে চর থেকে রাজ্জাক মাঝি নামের এক ব্যক্তি ফোন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভূইয়া ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে। তারা স্বাস্থ্যকর্মিদের পাঠিয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই প্রসুতি ও নবজাতককে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের সেখানে ভর্তি করা হয়। সেখানে তারা দুজনই সুস্থ্য আছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। আর এ আনন্দে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত সকলের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
নাহিদ মিয়ার বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। আর সুরমার বাবার বাড়ি বরগুনার আমতলীতে। দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি স্টিলের ফার্নিচারের কারখানার শ্রমিক নাহিদ। এটাই তাদের প্রথম সন্তান। জুনের শেষে সুরমার সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রখর রোদে পদ্মার চর দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার সময় প্রসব বেদনা ওঠে। তখন মাঝিকান্দি চরের বাসিন্দারা তাদের পাশে দাঁড়ায়। ওই গ্রামের নারীদের সহায়তায় সুস্থ ভাবেই সুরমা সন্তান প্রসব করেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই দম্পত্তিদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। তিনি তাদের অভিনন্দন জানান, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর পদ্মা নদীর চরে সন্তান প্রসব হওয়ায় তার নাম রাখেন ‘পদ্মা’। সানন্দে তা মেনে নেন নাহিদ ও সুরমা দম্পত্তি।
মো. নাহিদ মিয়া বলেন, এর আগে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন আগামী মাসে তাদের সন্তান জন্ম নেবে। এ কারনে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রাখার উদ্দ্যেশে বরগুনা রওনা হয়েছিলেন। তারা বুঝতে পারেননি পদ্মা নদীতে কোন নৌযান চলে না। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এসে আটকা পরেন। নদীর তীর দিয়ে দুই কিলোমিটার হাঁটার পর দুপুরের দিকে একটি ট্রলারে চরে পদ্মা নদীর একটি চরে নামেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হন। পাঁচ কিলোমিটার হাঁটার পর তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠে। তখন গ্রামবাসী তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। আল্লাহর রহমতে আমি কন্যা সন্তান পেয়েছি। আমাদের বিপদে যে ভাবে মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এক নারী চরের মধ্যে সন্তান প্রসব করেছেন এমন খবর পেয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের চিকিৎসা চলছে। এখন তারা দুজনই সুস্থ আছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমরা বাচ্চাটির প্রাথমিক চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচ বহন করব। এমনকি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও আমদের। এই পদ্মার চরে জন্ম নেওয়া শিশুটির ভবিষ্যতে পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দায়িত্ব নিবেন এমন ঘোষণাও দেন।