এবার আসছে দূরপাল্লার বাস চালুর সিদ্ধান্ত
নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রস্তাবনা যাচ্ছে আজ
লকডাউনের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মকর্তা এবং জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে গণপরিবহন চলাচলে কিছুটা শৈথিল্য আনা হচ্ছে। তবে এবার সীমিত পরিসরে দূরপাল্লার বাস চালুর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আজ শনিবার পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামীকাল রোববার (২৩ মে) চলতি লকডাউন শেষ হচ্ছে। তবে নতুন কোনো নির্দেশনা না থাকলে আগামী সোমবার থেকে সরকারি অফিস-আদালত খুলছে। লকডাউন বাড়বে কি না তা নির্ভর করবে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ওপর। তবে দূরপাল্লার বাস চালু হলেও আপাতত সীমান্ত বন্ধই থাকবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটোই সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে কাজ করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’-এর ওপর বেশি জোর দেয়া হবে। গণপরিবহন চালু হলে কতটা আসন ফাঁকা রাখা হবে, সে বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী রোববার অথবা সোমবার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখে গণপরিবহন চালু করায় ঈদে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ঈদে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া এবং ঈদের পর গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরতে মানুষকে নানাভাবে যানবাহন পরিবর্তন করতে হয়। গাদাগাদি করে ছোট্ট ছোট্ট যানবাহনে দ্বিগুণ তিন গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে করে স্বাস্থ্যবিধি কার্যত ভেঙে পড়ে। সামাজিক দূরত্ব মানা দূরের কথা মানুষ একে অন্যের ঘাড়ে বসে দীর্ঘপথ যাতায়াত করে। এ ছাড়াও সীমান্ত বন্ধ করে রাখা হলেও সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীসহ জেলা পর্যায়ে গণপরিবহন চালু করার পর দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখায় মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি করোনাভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা বেড়ে গেছে। কারণ সীমিত পরিসরে দূরপাল্লার বাস চালু রাখা হলে মানুষকে এত গাদাগাদি করে গ্রামে ফিরতে হতো না। দূরপাল্লা বাসের একটি সিট খালি রেখে এক সিটে যাত্রী বহনের বাধ্যবাধকতা জারি করে গণপরিবহন চালু করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। গত এপ্রিল মাসে গণপরিবহন চালুর কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তবে আগামী ২৪ মে থেকে গণপরিবহন যাতে চালু করা যায়, সে বিষয়ে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে আগামী ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চালু করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিকেরা। তারা বলছেন, রাজধানীসহ দূরপাল্লার পথেও বাস চালু করতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে সীমিত আকারে, অর্থাৎ অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও তারা তৎপর থাকবেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগামী সোমবার থেকে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস চলতে পারবে। তবে এসব বাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারিত হারের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি কার্যকর হবে। সীমিত আকারে সব জেলায় বাস চলাচল করবে। প্রতি যাত্রার (ট্রিপ) শুরু এবং শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই সমন্বয়কৃত ভাড়ার (৬০ শতাংশ বৃদ্ধি) অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার গণপরিবহন যথারীতি চলাচল করবে।
এর আগে গত বুধবার অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাস-মিনিবাস চলাচলের নির্দেশনা দেয় সরকার। বিনিময়ে বিদ্যমান ভাড়ার চেয়ে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। কিন্তু গত সোমবার থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তবে সীমিত আকারে শহর এলাকায় বাস-মিনিবাস চালু রাখা হয়।
ঈদের আগে রাজধানীতে শপিংমল খোলার পর গণপরিবহন বন্ধ রাখা কঠিন। এ ছাড়া ২৩ মে থেকে অফিস-আদালতও খুলবে। সে ক্ষেত্রে গণপরিবহন চালু করতেই হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাসও চলবে সেটা নিয়ে এখনো সরকারের স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্যবিদ, পরিবহন খাতের অংশীজন এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে। তবে শুরুতে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালু হলেও যাত্রী কম। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি বুঝে দূরপাল্লার পথে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রেন ও লঞ্চ এবং আন্তঃজেলা বাস আগের মতোই বন্ধ রেখে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ বৃদ্ধি করে গত ১৬ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধিনিষেধের মেয়াদ গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ট্রেন ও লঞ্চ এবং আন্তঃজেলা বাস আগের মতোই বন্ধ থাকছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়া হলেও জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি- বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, সরকারের রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত সকল দপ্তর ও সংস্থাও জরুরি পরিষেবার আওতাভুক্ত থাকবে। শুরুতে লকডাউনে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ কেবল খাদ্য বিক্রি বা সরবরাহ (টেকওয়ে বা অনলাইন) করতে পারবে। বারবার বলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা উধাও ছিল ঢাকায় ঈদ কেনাকাটায়। এর আগে গত ৫ মে লকডাউনের বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ঈদের পর তা আরো এক সপ্তাহ বাড়নো হলো।
ঈদযাত্রার সঙ্গে ভাইরাস যেন আরো ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ১৩ থেকে ১৫ মে ঈদের ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থল এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছে। ফেরিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ঈদ শেষে আবার ঘরমুখো মানুষগুলো ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়ি থেকে ফিরে এসেছেন।