‘খাবারের সন্ধানে’ দোকানে ঢুকেছিল পাঁচ ফুট লম্বা সাপটি
👁️নিউজ ডেস্ক ✒️
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দুলুছড়া লেমন টি রিসোর্টের সামনের একটি কসমেটিক্সের দোকান থেকে পাঁচ ফুট লম্বা একটি দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৩ জুলাই) দুপুরের দিকে দোকানটির একটি র্যাক থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, পর্যটন এলাকা হওয়ায় দুলুছড়া এলাকায় লেমন টি রিসোর্টের সামনে একটি মার্কেট রয়েছে। সকালের দিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর আসে, ওই মার্কেটের একটি কসমেটিক্সের দোকানের র্যাকে কালো রঙের একটি সাপ কুন্ডলি পাকিয়ে রয়েছে।
মালিক ভয়ে দোকানে ঢুকতে পারছেন না। এ সময় আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে সাপটিকে মারতে উদ্যত হয়। আবার কেউ একজন বন বিভাগে খবর দেন।
সজল দেব বলেন, বন বিভাগের কাছ থেকে খবর পেয়ে ত্রিশ মিনিটের চেষ্টায় সাপটিকে ধরতে সক্ষম হই। এটি সম্ভবত খাদ্যের সন্ধানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে এসেছিল। সাপটি উদ্ধারের পর লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করা হয়।
এ সময় বন কর্মকর্তা সুব্রত সরকার, তাজুল ইসলাম, ঋষি বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দাঁড়াশ সাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, দাঁড়াশ নির্বিষ সাপ। এরপ্রধান খাদ্য ইঁদুর, ছুঁচো ও ব্যাঙ। তাই সাপটি কৃষকের বন্ধু বলে পরিচিত। এটি সমান দক্ষতায় গাছে উঠতে, সাঁতার কাটতে বা দ্রুত ছুটতে সক্ষম।
এ প্রজাতির সাপের মধ্যে লড়াই বাঁধলে এরা পরস্পরের দেহকে পেঁচিয়ে ঊর্ধ্বমুখী উঠতে থাকে। এ সময় দারুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিষয়টি সাপের যুদ্ধ নাচ (combat dance) নামে পরিচিত। সাপটির পোষ মানার রেকর্ডও রয়েছে।
তিনি বলেন, দাঁড়াশ সাপের লেজের কাঁটা বিষ আছে এবং লেজের আঘাতে মানুষ মারা যায় এমন কথা শোনা যায়। এটি সম্পূর্ণ গুজব। এছাড়া সাপটি রাতে গাভীর বাট চুষে দুধ খায় বলেও একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
আসলে সাপটি খুবই নিরীহ প্রকৃতির। সাধারণত কাউকে কামড়ায় না। তবে বিষ না থাকায় কামড় দিলেও কোনো ক্ষতি হয় না।
মৃত সাপের ছবি দেখে দুঃখ প্রকাশ করে জোহরা মিলা বলেন, ইঁদুর প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। শুধু এই সাপটি বাঁচিয়েই ইঁদুরের বিশাল ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু মানুষের ভুল ধারণার কারণেই উপকারী এই সাপটি হারিয়ে যেতে বসেছে। কৃষকের একান্ত উপকারী বন্ধু হিসেবে সাপটি রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।