১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন থেকে ফেরা সেই রবিউল জানালেন ভয়াবহতার গল্প!

অনলাইন ডেস্ক।। 
‘ভয়াবহ আতংকে ছিলাম, কখন যে কি হয়ে যায় ? যদি আর জীবিত না ফিরতে পারি। আল্লাহর রহমতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বেঁচে গেছি। ফিরে এসেছি প্রিয় জন্মভূমিতে পরিবারের কাছে। এখন কি যে আনন্দ লাগছে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।’

ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার টাঙ্গাইলের রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার এভাবেই তার অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন ।

জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের হোসেন আলীর ৫ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার ছোট রবিউল আউয়াল (৩২)। চট্রগামের বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে লেখাপড়া শেষ করে ২০২১ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে চাকরি নেন।

রবিউল বলেন, ‘আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি তুরষ্ক থেকে জাহাজ নিয়ে ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছি। সেখানে ২ মার্চ বিকেলে আমাদের জাহাজে বোমা হামলা হয়। এতে জাহাজে থাকা ২৯ জনের মধ্যে ১ জন মারা যান।

হামলার ফলে ইন্টারনেটসহ জাহাজের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা একেবারে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি। মনে হয় আর বুঝি বাঁচবো না। ’

রবিউল বলেন, ‘শুকনা খাবারই ছিল অবলম্বন। এদিকে মোবাইলের মাধ্যমে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও প্রধান ইঞ্জিনিয়ার শিপিং কর্পোরেশনে যোগাযোগ করতে থাকেন। আমাদের উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে প্রার্থনা কামনা করি। পরে দূতাবাসের সাহায্যে ৩ মার্চ আমাদেরকে ট্রাক বোডের মাধ্যমে জাহাজ থেকে বন্দরে আনা হয়।

৩ ও ৪ তারিখ সেখানে থাকার পর ৫ তারিখ বাসে করে আমাদেরকে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয়। পরে মলদোভা হয়ে রোমানিয়া আসি। তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এখন আর যুদ্ধে মারা যাবো না। ইউক্রেনে ওই কয়েকটি দিনে ছিলাম মৃত্যুর ভাবনায়।
৮ মার্চ রোমানিয়া থেকে বিমান যোগে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে আমরা অবতরণ করি। বুধবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়ার বাসার পরিবারের সাথে মিলিত হই। ’

রবিউল আউয়াল আরো বলেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারের কোটি শুকরিয়া জানাই। সেইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকার ও শিপিং কর্পোরেশনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পোল্যান্ড এবং রোমানিয়া দূতাবাস অকল্পনীয় সহযোগিতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আমাদের জাহাজে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের আমিনুল ইসলাম নামের একজন শ্রমিকও ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণে বাঁচার পর পরিবারের সবার সাথে দেখা এটা যে কতটা আনন্দের সেটা আমিই জানি। কয়েকটা দিন রেস্ট নিয়ে রমযানের ঈদের পর চাকরিতে ফিরবো।’

রবিউলের বাবা হোসেন আলী বলেন, ‘আমার ছেলের চিন্তায় স্বাভাবিক ছিলাম না। পরিবারের সবার খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাতে ঘুম হতো না, অবিরত কান্না করতাম।

যদি ছেলেটিকে আর দেখতে না পাই। শুধু আল্লাহকে বলেছি তুমি ওদের সবাইকে বাঁচিয়ে দাও। টাঙ্গাইলে বাসায় ফিরে যখন আমাকে আব্বা বলে ডাক দিল তখন আমার প্রাণটা শান্ত হলো। আমি সাংবাদিক ও সরকারসহ সবার নিকট ওর বাবা হয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’

আরো দেখুন
error: Content is protected !!