ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কি.মি. দীর্ঘ যানজট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ
নিউজ ডেস্ক
দূরপাল্লার যান সরকারি বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ। তাতে কি। যেভাবেই হোক ঈদে বাড়ি ফিরতে হবে। যানবাহন প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গতকালও সকাল থেকেই গ্রামের দিকে ছুটছেন ঘরমুখো হাজারো মানুষ। শত ভোগান্তির পরও ঝুঁকি নিয়ে যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। ট্রাক, মিনি ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি সয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।
গতকাল ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির শহীদনগর থেকে পুটিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার তীব্র যানজট শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে যানবাহনের ঘরমুখী যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকার পর হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বাসে যত সিট তার অর্ধেক যাত্রী নেবে বলে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক দূরত্ব অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। আর বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ।
বাসে শতভাগ যাত্রীই শুধু নয়, দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিয়ে বাদুড়ঝোলা যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আগেই বলেছিলাম বাসে সামাজিক দূরত্ব মানা হবে না। কারণ যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মালিকরা আসলে করোনাকে বাস ভাড়া বাড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই এখন সামাজিক দূরত্ব মানা না হলেও ঠিকই বাড়তি বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
তবে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, বাস ভাড়া আগেই মালিকরা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে যে বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে ৩০-৪০ ভাগ বেশি ভাড়া তারা আগেই নিত। এখন যে ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে সেটা মালিকরা ওই ভাড়ার ওপরই নতুন করে নিচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার সায়েদাবাদের দূরত্ব ২০৮ কিলোমিটার। আগে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ছিল এক টাকা ৪২ পয়সা। শতকরা ৬০ ভাগ বাড়লে হয় দুই টাকা ২৭ পয়সা। এর সঙ্গে যদি ব্রিজের টোল যোগ করা হয় ২৫ টাকা তাহলে এখন যাত্রী প্রতি ভাড়া হওয়ার কথা ৪৭৫ টাকা। কিন্তু এখন যাত্রী প্রতি বিভিন্ন পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ৭৬০-৮০০ টাকা।
তবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভাড়ার চার্ট প্রকাশ করলে দেখা যাবে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ার ফলে নতুন যে ভাড়া হওয়ার কথা সেই ভাড়া আগে থেকেই আদায় করা হচ্ছে। ফলে চার্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার নতুন করে ৬০ ভাগ বেশি নেয়া হচ্ছে। বাস ভাড়ায় এখন চলছে নৈরাজ্য।
কুমিল্লার চাকরিজীবী নুরে আলম বলেন, স্ত্রী নিঝুম আক্তার ও ছয় মাসের মেয়ে ফাতিহাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা হন ভোর পাঁচটায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে দ্বিগুণ ভাড়ায় বাসে ওঠেন তারা। পথে যানজটে আটকে থেকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত এক ঘণ্টার পথ পার হতে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। বাকি পথের ভোগান্তি মাথায় রেখেই আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন বলে জানালেন।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী প্রাইভেটকারের চালক জাহিদ হাসান বলেন, ভোর পৌনে পাঁচটায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রওনা দিয়েছি। পথে পথে শুধু যানজট আর যানজট। ঈদ সামনে রেখে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায়, উল্টো পথে যানবাহন চলায়, মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে লোকাল বাসের স্ট্যান্ড গড়ে তোলায়, পণ্যবাহী যানবাহন ছোট যানবাহনকে যথাসময়ে সাইট না দেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গণপরিবহন ছাড়াই মহাসড়কে এমন পরিস্থিতি। গণপরিবহন চলাচল করলে অবস্থা কী হতো? এ বিষয়ে কুমিল্লা হাইওয়ে থানার ওসি জহরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন ধরণের গাড়ির চাপ বেড়েছে। দূরপাল্লার কোন বাস যাতায়াত করা দেয়া হচ্ছে না। চেকপোস্টে ঢাকা থেকে কুমিল্লামুখী যাত্রী পরিবহনকৃত বাস আটকে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত বাড়ির বেড়েছে মহাসড়কে। সেই সঙ্গে পণ্য পরিবহনকৃত গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ। মহাসড়কের গাড়ির চাপ বাড়ায় ধীরগতি তৈরি হচ্ছে। তবে যানজট নেই।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বন্ধু সেতু মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ ততোই বেড়েছে। সকাল থেকে সময় বাড়ার সাথে সাথে সড়কে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহন। ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। ফলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ সময়েও গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত সেতুর উপর দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৪১ হাজার ৬২৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যত সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে, তার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিক সময়ে একদিনে ১১-১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। বর্তমানে প্রায় চারগুণ যান পারাপার হচ্ছে।
গতকাল সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়কে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কে দূরপাল্লার বাস নেই। তবে চাপ রয়েছে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের। এসব যানবাহনে গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ করেছে সরকার। তবে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে বাধা নেই। সকাল থেকে সড়কে উত্তরবঙ্গমুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানবাহনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, মুরগির খাচার ওপর বসে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে গাদাগাদি করে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে ফিরছে মানুষ। দুর্ঘটনা ও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ফিরছে তারা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও যানবাহন আটকে নেই। গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি