মোবাইল ফোনআসক্তি থেকে শিশুদেরকে বাঁচাতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বিংশ শতাব্দীতে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করতো, প্রাকৃতিক পরিবেশে তার লালন-পালন করা হতো এবং সে বড় হতো এক অনবদ্য পরিবেশের নিবিড় যত্নে।
শিশুকালে তাকে শুনানো হতো ঘুমপাড়ানির গান, রূপকথার গল্প, বিভিন্ন প্রকারের কেচ্ছা-কাহিনী ও নীতিকথা। একটি শিশুর যত্নের মধ্যে খাবার খাওয়ানোটা বরাবরের জন্যই অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।
আগের দিনে মায়েরা এ ব্যাপারটি অনায়াসেই সামাল দিতেন। শিশুকে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় ঘুরে ঘুরে পাখি, ফুল, ফলসহ প্রকৃতির সকল অপরূপ সৃষ্টিকে দেখিয়ে খাবার খাওয়াতেন।
শিশুটি বেড়ে উঠত অবলীলায়। তার মননের প্রস্ফুটন ঘটত উম্মুক্ত আকাশের ন্যায়। সুনির্মল বসু শিশুদের এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই লিখেছিলেন, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র, নানানভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র’।
কিন্তু হায়! হঠাৎ করে সব কিছুরই যেন মহাবিপর্যয় হলো। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন মোবাইল আবিষ্কার হয় এবং ধীরে ধীরে এর কর্মসীমা বৃদ্ধি পেয়ে স্মার্টফোনে পরিণত হয়, তখন থেকে শিশু লালন ও পরিচর্যার প্রেক্ষাপটও পরিবর্তন হয়ে যায়।
একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান সময়ে এসে, মা তার সন্তান পরিচর্যার জন্য হাতে পেয়েছে স্মার্টফোন নামক এক আশ্চার্য যন্ত্র। যদিও শিশুদের জীবনে এটি যন্ত্র না হয়ে বরং যন্ত্রণা হয়ে উঠেছে।
কারণ, আজকালের মায়েরা তার সন্তানের কান্না থামাতে বিভিন্ন গল্পের ডালা না সাজিয়ে বরং শিশুর হাতে তুলে দেয় কার্টুন ভিডিও।
সারা দিনের কর্ম সম্পাদনের পরে মা যখন বিনোদন জগতের (টিভির) সম্মুখে নিজের ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দেন, তখন সন্তানকে শান্ত করতে ব্যবহার করেন কার্টুন ভিডিও।
পাখি, ফুল, ফল দেখিয়ে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় হাঁটা হাঁটি করে শিশুকে এখন আর খাওয়ানো হচ্ছে না, বরং তাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন।
শিশুকে ঘুম পাড়াতে এখন আর রূপকথার গল্প শুনাতে হয় না। স্মার্টফোন মানেই শিশু চুপচাপ শান্ত, স্মার্টফোন মানেই শিশুর ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া। স্মার্টফোন মানেই শিশু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া। এ যেন আলাউদ্দিনের প্রদীপ!
স্মার্টফোন কোনো ক্ষতি সাধন ছাড়াই যদি শিশু রক্ষণাবেক্ষণে এত উপকার করত, তাহলে তো কোনো কথাই ছিল না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা এক মিনিট মোবাইলে কথা বললে মস্তিষ্কে যে কম্পন সৃষ্টি হয় তা স্থির হতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা।