সরকার মেরামত করবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ ঘর
✒️ নিউজ ডেস্ক
শীর্ষ কর্মকর্তারা যাচ্ছেন সরেজমিন পরিদর্শনে
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ভূমিহীনদের ৩০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার দ্রুত এই ঘরগুলো মেরামত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো সরেজমিন পরিদর্শনে যাচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
এ পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন ভূমিহীনকে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি করে ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অতিবৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা কারণে এখন পর্যন্ত ৩০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা দেশের আট বিভাগে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো দেখবেন। তিনি নিজেও আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার পরিদর্শন কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনকালে ঘর নির্মাণের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হবে।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো পরিদর্শন করবেন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৪ জন পরিচালকসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের পদস্থ কর্মকর্তারা সারাদেশে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে রাখবেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও অবহেলায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এই দুষ্টচক্রে জড়িত কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দু’জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ওএসডি হয়েছেন আট কর্মকর্তা। ৩৬টি উপজেলায় ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ এবং অনিয়ম হওয়ায় ২২ জেলার প্রশাসক তদন্ত কমিটি করেছেন।
সেই সঙ্গে সবগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিদর্শন টিমের সদস্যরা। তাদের রিপোর্টে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে।
ওই রিপোর্টে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বরগুনার আমতলী, বগুড়ার শেরপুর, শাজাহানপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, সুনামগঞ্জের শাল্লা ও মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলায় ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম, অবহেলা এবং দুর্নীতির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
এ জন্য ওএসডি হয়েছেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম, বরগুনার আমতলীর ইউএনও আসাদুজ্জামান, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও লিয়াকত আলী সেখ, মুন্সীগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও রুবায়েত হায়াত শিপলু, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও মাহমুদা পারভীন, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও তাসনুভা নাশতারান, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ইউএনও আল-মুক্তাদির হোসেন ও মুন্সীগঞ্জ সদরে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন।
ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করার ঘটনার সঙ্গে ৩৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আলোচিত সাত উপজেলা ছাড়াও ২০১৭-১৮ অর্থবছরসহ বিভিন্ন সময়ে ২৯টি উপজেলায় ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এই উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বগুড়ার আদমদীঘি, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, লালমনিরহাট সদর, গাজীপুরের শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, জামালপুরের ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ময়মনসিংহ সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, ভোলার লালমোহন, পাবনার সাঁথিয়া, মানিকগঞ্জের ঘিওর, নাটোর সদর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, কুমিল্লার দেবিদ্বার, বরিশাল সদর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হলেন ইউএনও। অন্য চার সদস্য হলেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি), এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, সংশ্নিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। অর্থাৎ ঘর নির্মাণে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তাদের সার্বিক দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
এ জন্য সংশ্নিষ্ট উপজেলাগুলোর ইউএনও এবং অন্য তিন কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪৪ জন কর্মকর্তা এবং ৩৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর নির্মাণের বেলায় নীতিমালা মানা হয়নি। ওইসব ক্ষেত্রে অনেক ঘরে নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে। গুণগত মানও ঠিক হয়নি। ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ভেঙে গেছে। দেয়াল ধসে পড়েছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহূত মালামালও ছিল নিম্নমানের।
নিচু এলাকায় ঘর নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার ভূমির মালিকরাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ নিয়ে কয়েকটি উপজেলায় নীতিমালাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন সমকালকে বলেন, ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে ফলাও করে অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। মাত্র ৩০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেইসব ঘরের পিলারসহ বিভিন্ন অংশের ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অনিয়ম ও অবহেলা সহ্য করা হবে না। আর ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শতভাগ আন্তরিক।
এ জন্য সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। ছুটির দিনেও কাজ করা হচ্ছে। এমনকি করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এই পরিদর্শন কার্যক্রম চলাকালেই ক্ষতিগ্রস্ত সবক’টি ঘর মেরামত করা হবে।