১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় টাকা ও স্বর্ণ লুটের অভিযোগে ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

মহানগর ডেস্ক।।
টাকা ও স্বর্ণ লুটের অভিযোগে ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের অভিযোগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার তিন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলি আদালতে মামলাটি করেন।

মামলা আমলে নিয়ে বিচারক বেগম মিথিলা জাহান নিপা কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার (১১ আগস্ট) কুমিল্লা জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে- কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই (নিরস্ত্র) সাইফুল ইসলাম (৩৫), জীবন কৃষ্ণ মজুমদার (৩২), কামাল হোসেন (৩৫); এএসআই কৃষ্ণ সরকার (৩৫) মতিউর রহমান (৩৮) এবং কনস্টেবল নুরুজ্জামান (৩০) ও জামাল হোসেন (৩৫)। মামলায় আরও ৮/১০ জন পুলিশ সদস্যকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী সালমা আক্তার উল্লেখ করেন, গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় তার ভাই লোকমান হোসেনের (৯ মামলার আসামি) খোঁজে ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ তাদের বাড়িতে আসেন।

পরিচয় জানতে চাইলে তারা সবাই ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ সদস্য হিসেবে দাবি করেন। পুলিশ শুনে দরজা খুলে দিলে ঘরে প্রবেশ করেই সাইফুল ইসলাম, কৃষ্ণ সরকার, নুরুজ্জামান ও জামাল হোসেন বিভিন্ন রুম তল্লাশি শুরু করেন। কোনও মামলার ওয়ারেন্টের আছে কি-না জানতে চাইলে কৃষ্ণ সরকার গালমন্দ করে লাঠি দিয়ে শোকেসের গ্লাস ভেঙে ফেলেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আলমারির চাবি নিয়ে তল্লাশির নামে ড্রয়ারে থাকা দুই লাখ টাকা এবং দুই জোড়া কানের দুল, দুইটি চেইন ও তিনটি আংটিসহ চার ভরি স্বর্ণালংকার এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

চিৎকার করলে পাশের বাড়িতে থাকা সালমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহামদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে দোকানের সামনে থেকে টেনে-হিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধা বাবা নিজের পরিচয় দিয়ে আপত্তি জানালে এএসআই কৃষ্ণ সরকার তার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন।

এছাড়া পুলিশের অন্য সদস্যরা সালমার বাবা ও স্বামীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। উপস্থিত সবাই চিৎকার করলে গুলির হুমকি দিয়ে পুলিশ সদস্যরা সালমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। আহত মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সালমা অভিযোগ করে বলেন, ‘নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট এবং বিনা অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও স্বামীকে মারধরের ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে স্থানীয় একটি চক্র জড়িত। তাদের মধ্যে স্থানীয় চান্দলা হাইস্কুল কমিটির সভাপতি বিল্লাল, একই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ডা. বিল্লাল, চান্দলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কনু মেম্বার ও স্থানীয় মোস্তফা মেম্বার রয়েছেন।’

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ‘সালমা আক্তারের ভাই লোকমান হোসেন ডাকাতিসহ ৯ মামলার আসামি। পলাতক থাকায় পুলিশ সাদা পোশাকে আসামি লোকমান হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য সালমা আক্তারের বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

ওই সময় সালমা আক্তার, তার স্বামী আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি পুলিশের ওপর চড়া হয়। তখন পুলিশ সদস্যরা তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে। পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনকে গ্রেফতার করে।’

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন‘মামলার প্রেক্ষিতে আদালত তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগটি আমরা তদন্ত করে দেখবো।’

আরো দেখুন
error: Content is protected !!