৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গত ১ বছরে কুমিল্লায় ৭১ পরিচয়হীন লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
গত ১বছরে কুমিল্লায় ৭১টি পরিচয়হীন ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫জন পুরুষ এবং ১৬জন মহিলা ।

জেলার ১৭টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পেরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখা অফিস থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র থেকে আরো জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মিয়া বাজার হাইওয়ে থানা, নগরীর কান্দিরপাড় ফাঁড়ি, বুড়িচং থানা, সদর দক্ষিণ থানা ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়িতে ৬ পরিচয়হীন ব্যক্তি লাশ পাওয়া যায়, ফেব্রুয়ারিতে চকবাজার ফাঁড়ি, দেবপুর ফাঁড়ি, কোতয়ালী থানা, ব্রাহ্মণপাড়া, ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানায় ৫জন, মার্চে ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানায়, লাকসাম রেলওয়ে থানায়, দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায়, দেবপুর ফাঁড়ি ও কোতয়ালী থানায় ৮জন, এপ্রিল মাসে মিয়াবাজার হাইওয়ে থানা, ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানা, মুরাদনগর থানা, কোতয়ালী মডেল ও লাকসাম রেলওয়ে থানায় ৭জন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়।

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে মে মাসে ৪ জন, জুন মাসে ৯জন, জুলাই মাসে ৪জন, আগষ্ট মাসে ৭জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৫ জন, অক্টোবর মাসে ৯ জন, নভেম্বর মাসে ৫ জন এবং চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ২জন পরিচয়হীন ব্যক্তির লাশ পাওয়া পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উদ্ধার হওয়া অধিকাংশই খুনের শিকার হন। হত্যার পর লাশ গুম করতে খুনিরা লাশ নদী ও জলাশয়ে ফেলে দেয়। কখনো আবার মহাসড়কের পাশে নির্জন স্থানে লাশ ফেলে রাখে।

এছাড়াও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম থেকে গত ১২ বছরের বেওয়ারিশ লাশ (পরিচয়হীন) দাফনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বার বছরে সংস্থাটি কুমিল্লায় ১২৯৪ লাশ দাফন করেছে।

প্রতি বছর গড়ে ১০৭ ব্যক্তির বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে। চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং পর্যন্ত ৭১ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে সংস্থাটি। ২০২১ সালে এর সংখ্যা ছিল-৮৮, ২০২০সালে-৭৪, ২০১৯সালে-১০৮, ২০১৮সালে-১০৩, ২০১৭সালে-১০৫, ২০১৬সালে-১৩০, ২০১৫সালে-১১৩, ২০১৪ সালে-১০৮, ২০১৩সালে-৯৫, ২০১২সালে-১১৯, ২০১১সালে-১১৭ , ২০১০ সালে ১৩৪। এসব লাশের অধিকাংশের বয়সই ২০ থেকে ৫০ এর মধ্যে।

পুলিশ বলছে, অপরাধীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার জলাশয়, রেললাইন ও মহাসড়কের পাশে নির্জন স্থানকে লাশ গুমের ‘ডাম্পিং জোন’ মনে করে। অন্য জেলা থেকে খুন করে তারা এই জেলার বিভিন্ন জোনে লাশ ফেলে যায়। কয়েক দিনের মধ্যে লাশ পচে গলে যায়।

এতে করে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। ফলে খুনের রহস্য উন্মোচন হয় না। পরিচয় না থাকায় তদন্তে অনেক বেগ পেতে হয়। এ কারণে এসব ঘটনা তদন্তে পুলিশের তেমন আগ্রহ নেই।

অজ্ঞাত লাশের অনেকেই আবার দুর্ঘটনার শিকার। লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, আমরা প্রত্যেক থানা থেকে পরিচয়হীন মরদেহগুলোর ব্যাপারে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করে থাকি।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর যাদের পরিচয় পাওয়া যায় না তাদেরকে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়ে থাকে।

পিবিআই(পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাত বা পরিচয়হীন ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মানুষিক সমস্যার রোগী। আমরা থানা পুলিশ বা কোন মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিকে সনাক্ত করার চেষ্টা করি।

যাদের ভোটার আইডি কার্ড নেই ( যেমন পাগল-মানসিক ভারসাম্যহী), যাদের বয়স ২০ বছরের নিচে এবং যে সমস্ত ব্যক্তির দেহ পচে যায় তাদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

হাইওয়ে পুলিশ সুপার (কুমিল্লা অঞ্চল ) মো: রহমত উল্লাহ জানান, আমরা বিভিন্ন সময় মহাসড়কের পাশ থেকে যে সব মরদেহ উদ্ধার করে থাকি সেসব ঘটনায় আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।

শুধুমাত্র পিবিআই ও সিআইডি’র কাছে ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি আছে। ঘটনা তদন্তে যাদের পরিচয় পাওয়া যায় নাম তাদেরকে আঞ্জুমান মুফিদুল ্ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়।

লাকসাম রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, রেলল্ইানের পাশ থেকে যেসব মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ট্রেনে কাটা পড়ে যেসব মৃত্যু হয় তাদের পরিচয় পাওয়া না গেলে আমরা অজ্ঞাত বা পরিচয়হীন মরদেহগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করে থাকি।

দাফনের পরও তদন্তে অনেকের পরিচয় বের হয়ে আসে যা পরবর্তীতে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!