২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চালু হলো দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজধানীর মহাখালীতে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে’র সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, গত দেড় মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই জায়গায় আমরা একটি উন্নত পরিবেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

গত বছর যখন দেশে করোনা রোগীর সংক্রমণের হার বেড়ে যায়, তখন রাজধানীর বসুন্ধরা এবং মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত রোগী না থাকায় বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

ডিএনসিসি মার্কেটের আইসোলেশনের পরিবর্তে বিদেশগামীদের জন্য করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন এই আইসোলেশন সেন্টারেই ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক আইসিইউ সমমনা শয্যা তৈরি করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ রয়েছে ১১২টি, এইচডিইউ ১০০টি।

ঢাকা শহরের জনসংখ্যা অনুপাতে আইসিইউর সংখ্যা কম জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আইসিইউ সংকটের বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। বাস্তবিক অর্থে ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর সংখ্যা কম। তবে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউর চেয়ে অক্সিজেনের দরকার বেশি হয়।

তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। পাশাপাশি ডায়ালাইসিসের জন্য পাঁচটি শয্যা রয়েছে। এছাড়া ১০টি ভিআইপি কেবিন ও ৮টি এসি কেবিন স্থাপন করা হয়েছে।

এখন দেশে যে পরিমাণ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই তরুণদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেশি দেখা গেলেও মৃত্যুর হার কম। বরং তারা পরিবারের সবাইকে করোনা আক্রান্ত করছেন। তাদের বয়স্ক বাবা-মা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাই অপ্রয়োজনীয় বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মার্কেটটি চালু হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মার্কেটটিতে করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেই।

প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, এ মার্কেট নির্মাণে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ডিএনসিসি। যার খরচ দোকানির কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল। কিছু দোকানী এখনো দোকান ফেরত চান। তাদের মধ্যে ১১ জন আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। এই দোকানির মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

দেশে প্রশিক্ষিত নার্স সংকটের কথা জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নার্সিং কলেজ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব এখানে নার্সিং কলেজ স্থাপনের জন্য। তা করা হলে দেশের স্বাস্থ্যখাত আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। এছাড়া এই হাসপাতলে এখন করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি অপারেশনের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!