২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন সামনে রেখে আবারো ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক।।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে (ষড়যন্ত্র) করেছে।

আবার ইলেকশন যতই সামনে আসছে, আবারও… মানে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের কী লাভ হবে জানি না, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে।’

বুধবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে গণভবনে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তাঁর বিরুদ্ধে সবসময় একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে—এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করলো, সেই পরিবার থেকে আমি বেঁচে এসে সরকারে এলাম। সাফল্য এনে দিলাম।

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম। এটা তো অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি, তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তবে যারা এই তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদের কার কী সে খবরও আমি রাখি। চিনি তো। আমার তো অচেনা কেউ নেই। তাদের বিষয়ও আমার জানা আছে। তারা তাদের চক্রান্ত করে যাচ্ছে।’

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো এক একটা জিনিস টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন, কেউ ভূমিহীন থাকবে না। এটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন নোয়াখালী থেকে।

আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। ‌প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম। কিন্তু জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম এত বেড়ে গেছে। এ কারণে আমাদের সাশ্রয়। কেবল আমরা না, সমগ্র ইউরোপ থেকে শুরু করে সব দেশে, এমনকি আমেরিকাও এখন জ্বালানি সাশ্রয় করে। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে আবার বিপদে না পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। করেও না।

অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা ক্ষমতার চেয়ারটা কীভবে দখল করে রাখবে—ওই চিন্তায় ব্যস্থ থাকে। আমাদের কাছে এটা কোনও বড় বিষয় নয়।

ক্ষমতাটা আমার কাছে জনগণের সেবা করার একটা সুযোগ। তো ক্ষমতা থাকলে আছে, না থাকলে নাই। থাকলে যেটা সুবিধা হয়— দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই। আর সেই সুযোগটা যতটুকু পারি কাজে লাগাই। আমি সেভাবেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আবার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একেবারে তৃণমূল মানুষের উন্নতি ও তাদের পরিবর্তনে কাজ করছি। ওইভাবে কিন্তু আমাদের যাত্রা শুরু করেছি। গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষগুলো, তাদের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন। কত অত্যাচার সহ্য করেছেন। জেল খেটেছেন। তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তিনি কিন্তু এই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।’

১৫ আগস্টের প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট যারা মারা গেছেন, তাদের তো কাফন-দাফন কিছু হয়নি। কিন্তু আব্বার লাশটা যখন টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গেছেন, তখন ওখানকার যে মাওলানা সাহেব এবং আমাদের কয়েকজন, তারা কিন্তু জোর করেছিলেন যে, না আমরা… সোজা আর্মি হেলিকপ্টারে করে সেখানে নিয়ে যায়।

তারা কোনোমতে কবর খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েই চলে আসবে। যেহেতু আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব, উনারা সবাই বলেন যে আপনারা যদি মনে করেন— শহীদী ‍ মৃত্যু, তাহলে ওভাবেই দিতে পারেন।

তবে মুসলমানের লাশ, এটা তো একটু কাফন-দাফন দিতে হবে। সব এলাকায় কারফিউ ছিল। সব বন্ধ। টুঙ্গিপাড়ায় তখন কোনও দোকান ছিল না। যেতে হতো সেই পাটগাতী বাজারে। তখন রেডক্রসের যে কাপড় তিনি (বঙ্গবন্ধু) সাধারণ মানুষদের বিলাতেন, ওই কাপড় নিয়ে এসে তার পাড় ছিঁড়ে, সেটাই কিন্তু তিনি নিয়ে গেছেন।

আর কিছু নেননি মানুষের কাছ থেকে। আর কিছুই নেননি। সেই রেডক্রসের কাপড় নিয়েই ওনার কাফন। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের আর যারা মারা গেছেন, তাদের তো কিছুই করা হয়নি। যে যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকবিলা করেও আমাদের.. তবে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে। একইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদি না থাকে, সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে।

কারণ, একে তো করোনা, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তারপর এই স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। প্রাথমিক এই স্যাংশনের পরে তো সব জিনিসের দাম বাড়ছে।

আমি জানি না, কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে শুধু অস্ত্র যারা উৎপাদন করে, তারা লাভবান হচ্ছে। আর মরতেছে সাধারণ মানুষ। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে আজ কী মানবতার জীবন! সেটাই সব থেকে দুঃখজনক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেককে বলে দিচ্ছি। একইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। যে যা পারো লাগাও। একটা মরিচ গাছ লাগিয়ে খেলেও তো কাজে লাগে। এটা ঠিক আমাদের সবাই এটা করছে। এটা সবাইকে করতে হবে।

খাদ্যটা যদি নিজে উৎপাদন করে ঠিক রাখতে পারি, তাহলে আমাদের পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। সেটা আমাদের সব থেকে বেশি কাজে লাগবে। এটাকে লক্ষ্য রেখে প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল উঠে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এরমধ্যে প্রথম এলো করোনা। তারপর যুদ্ধ। এরপর স্যাংশন। পাল্টাপাল্টি স্যাংশন। যার জন্য আজকে সারা বিশ্বই অত্যন্ত একেকটা দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

তারপরও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি। কোনও মানুষ যেন কষ্টে না থাকে, সেটা আমাদের চেষ্টা। সেটাই আমরা করছি। সেই প্রচেষ্টা আমরা নিচ্ছি।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!