২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকে প্রেম করে কলেজছাত্রীকে বিয়ে ঝাড়ুদারের, গরিব বলায় হত্যা

অনলাইন ডেস্ক
স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগে সাকিব হাওলাদার নামে এক ঝাড়ুদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১ জুন) বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রাম থেকে অভিযুক্ত সাকিবকে গ্রেফতার করে এখন পর্যন্ত কলেজছাত্রী নাজনীন আক্তারের(১৯) লাশ খুঁজে পায়নি পুলিশ।

মঙ্গলবার সারাদিন হরহর গ্রামে অভিযান চালিয়েও খোঁজ মেলেনি লাশের। তবে একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি ওড়না ও মৃতদেহের ধ্বংসাবশেষ জাতীয় বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি নাজনীন আক্তারের মৃতদেহ কিনা নিশ্চিত নয় পুলিশ।

গ্রেফতার সাকিব হোসেন হাওলাদার (২৪) বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে। তিনি বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের ঝাড়ুদার। সাকিবের বাবা আব্দুল করিমের পরিবার কাজের জন্য গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামে বসবাস করেন।

কলেজছাত্রী নাজনীন আক্তার (১৯) বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের মেয়ে। বগুড়ার গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক বছর আগে আব্দুল লতিফের মেয়ে নাজনীন আক্তারের সঙ্গে সাকিব হাওলাদারের বিয়ে হয়।

পুলিশ জানায়, ফেসবুকে তাদের প্রেমের সম্পর্কের পর গত ২৩ আগস্ট বগুড়ার একটি পার্কে বসে বিয়ের দিন ঠিক করে তারা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাজনীনের বাড়িতে দুজনের বিয়ে হয়। নাজনীনের খালু সেই বিয়ে পড়ান। বিয়েতে নিজের পরিচয় গোপন রাখে সাকিব।

পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২৪ মে বগুড়ার চারমাথা থেকে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালে নিজের বাড়িতে আসে সাকিব। সাকিব জানান, তার পরিবার এই বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তারা নানার বাড়িতে থাকে এই সুযোগে নাজনীনকে বাড়িতে তুলেন সাকিব।

নাজনীন বাড়িতে গিয়ে টিনের ঘর এবং ওয়াশরুম দেখে সাকিবের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সেই সঙ্গে গরিব বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দেন সাকিব।

২৬ মে বগুড়া সেনাবাহিনী থেকে তাকে কাজে যোগদান করতে বলা হয়। যোগদানের পরপরই সাকিবের ইউনিট অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় পুরো ঘটনা খুলে বলেন সাকিব। পরে তাকে বগুড়া পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

নাজনীন আক্তারের ভাই আব্দুল আহাদ প্রামাণিক বলেন, গত ২৪ মে সাকিব তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালে আসে। পরে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ও কোনও যোগাযোগ না থাকায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি ও সেনানিবাসে অভিযোগ করা হয়। এরপরই আসল ঘটনা জানতে পারি।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগের সূত্র ধরে সাকিবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নাজনীনকে হত্যা করে লাশ গুমের কথা স্বীকার করে। সেখান থেকে কিছু আলামত পাওয়া গেলেও লাশ উদ্ধার হয়নি। সাকিব একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করে সাকিব। ২৪ মে নাজনীনকে নিয়ে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে বাবার ভাড়া বাসায় আসে। সেখানে এসে নাজনীন জানতে পারে তার বাবা আব্দুল করিম ভ্যানচালক। তখন সাকিবের কাছে নাজনীন পারিবারিক অবস্থার কথা গোপন করার কারণ জানতে চান। এ কারণে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়।

একপর্যায়ে রাগে নাজনীন সাকিবকে গরিবের ছেলে বলে গালিগালাজ করে। ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনকে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে সাকিব। পরে ঘরের পেছনে থাকা সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে বগুড়ায় কর্মস্থলে যোগ দেয়। লাশ সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলার কথা বললেও পাওয়া যায়নি।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!