বাংলাদেশের কাছে হাত পাতার পর্যায়ে পাকিস্থান!
নিউজ ডেস্ক
সাবাস বাংলাদেশ, দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্ব ব্যাংকের পাকিস্থান প্রোগ্রামের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্থানের অর্থনীতিতে যে ধ্বস, তা চলমান থাকলে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি একই হারে এগিয়ে চললে অচিরেই সাহায্যের জন্য বাংলাদেশের কাছে হাত পাততে হতে পারে পাকিস্থানকে।
“এইড ফ্রম বাংলাদেশ” নামের এক প্রবন্ধে আবিদ হাসান লিখেছেন, ২০ বছর আগে এটা চিন্তাও করা যেত না যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্থানের দ্বিগুণ হবে। এভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থালে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।
সোমবার (২৪ মে) প্রবন্ধটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে এই উপদেষ্টা আরও লেখেন, অর্থনীতিতে পাকিস্থানের এই অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিকে বাংলাদেশ থেকে সাহায্য নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
আবিদ হাসান পাকিস্থানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি দেশটির ফেডারেল বোর্ড অব রেভেনিউ ট্যাক্স রিফর্মস গ্রুপের সদস্যও ছিলেন।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্থানকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে চাইলে, পাকিস্থানের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তেহরিক ই ইনসাফকে (পিটিআই) অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও ঋ’ণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্থানের বর্তমান সরকার আগের সরকারগুলোর মত সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুয়ারে দুয়ারে “ভিক্ষার থালা” নিয়ে ঘুরেছে।
অর্থনীতির এই অবস্থার জন্য পাকিস্থানের নিজেই দায়ী। তবে দেশের রাজনৈতিক নেতারা তা মানতে নারাজ। তারা বারবার তাদের শত্রুপক্ষ ভারত, আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংককে এর জন্য দোষারোপ করছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আইএমএফ কিংবা বিশ্ব ব্যাংকের কিছুটা দায় আছে। তবে আসল কথা হলো, খারাপ অর্থনীতির জন্য মূলত পাকিস্থানই দায়ী। পাকিস্থানের ভুল নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’টো হলো-
১. সরকারের দেশি ও বিদেশি ঋ’ণের অত্যাধিক ব্যবহার। ২. অত্যাধিক বিদেশি ঋ’ণ থাকার পরও রপ্তানির তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত আমদানি।
আবিদ হাসান আরও বলেন, ধর্মীয় অনুভূতি, কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা ও সততার অভাব, অগোছালো রাজনীতি, দুর্বল জনপ্রশাসনের মতো বিষয়গুলোতে পাকিস্থানের সাথে ব্যাপক মিল থাকা স্বত্বেও বাংলাদেশ অনেক ভালো করছে যা একটি বাস্তব উদাহরণ।
মাত্র দুই দশকে অর্থনীতির মূল সূচকগুলোতে পাকিস্থানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্থানের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি। কীভাবে বাংলাদেশ এমন চমৎকার এক দৃষ্টান্তে পরিণত হলো আর অপরদিকে পাকিস্থান নিমজ্জিত হলো অন্ধকারে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জিডিপির মোটামুটি ৩০ শতাংশ সঞ্চয় করা হয়। আর পাকিস্থানে এই সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৫-২০ শতাংশ।
২০০০ সালে পাকিস্থানের রপ্তানি ছিলো বাংলাদেশের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। আর এখন বাংলাদেশের রপ্তানি ৭০০ শতাংশ বেড়েছে, যা পাকিস্থানের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বেশি। ২০২০ সালে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি পাকিস্থানের দ্বিগুণ।
এছাড়া গত দুই দশকের বেশিরভাগ সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক ঘাটতি ছিলো জিডিপির ৩ শতাংশ, আর পাকিস্থানের ছিলো এর দ্বিগুণ। অপর দিকে ২০ বছর ধরে পাকিস্থানের মাথাপিছু সমন্বিত সরকারি খরচ ছিলো ৪ হাজার মার্কিন ডলার। একই খাতে বাংলাদেশের খরচ ছিলো এর অর্ধেক।
আবিদ বলেন, পাকিস্থান মাথাপিছু সরকারি খরচ বেশি করা স্বত্বেও বাংলাদেশের চেয়ে তারা অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে আছে।
পাকিস্থানের দায়িত্বহীন অর্থিক ও বাণিজ্যিক নীতির ফল-
১. পাকিস্থানের জনগণের মাথাপিছু ঋ’ণ সরকারের রাজস্বের প্রায় ৬০০ শতাংশ, যা বাংলাদেশের দ্বিগুণ। ২. বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ব্যাংক লোন ২০০ শতাংশ এবং পাকিস্থানে ৮০ শতাংশ। ৩. পাকিস্থানের বৈদেশিক ঋ’ণের পরিমাণ রপ্তানির ৪০০ শতাংশ, যা বাংলাদেশের চেয়ে ৪ গুণ বেশি।
আবিদ হাসান বলেন, এটা আমাদের (পাকিস্থানের) আত্মসম্মানে আঘা’ত করবে, তবুও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, ঋ’ণ কমাতে, বাংলাদেশের কাছে হাত পাতার সম্ভাবনা দূর করতে হলে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে হবে। সফলতার কোনো শর্টকাট নেই, সঠিক অর্থনৈতিক নীতিমালা মেনে চলা ছাড়া।
সূত্র:সময় এখন ডেস্ক: