পার্কে ঈগল গ্রুপ ও রতন গ্রুপের দ্বন্ধে শাহাদাত হ’ত্যা: র্যাব
নিজস্ব প্রতিনিধি।।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কর্তৃক কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানাধীন আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল এর সামনে কিশোর গ্যাং ‘রতনগ্রুপ’ কর্তৃক প্রকাশ্য দিবালোকে শাহাদাৎ হোসেন (১৭) নামে এক কিশোরকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকান্ডের মূল হোতা মোঃ রতন (২০) সহ প্রধান ০৬ আসামী গ্রেফতার। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।
গত ১৯ আগস্ট ২০২২ইং তারিখ বিকেলে কোতয়ালী থানাধীন আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল এর সামনে দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা শাহাদাৎ হোসেন (১৭)’কে প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল রাস্তায় নৃশংসভাবে হত্যা করে।
নিহত শাহাদাৎ হোসেন নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়া এলাকার বশু মিয়ার বাড়ির মোঃ শাহ আলম ভূঁইয়ার ছেলে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নিহত শাহাদাৎ নগর উদ্যানের একটি রাইডের সাবেক কর্মচারী। ভিকটিম বেশ কয়েকদিন সেখানে চাকরি করেছে এবং গত ১৫ দিন আগে উক্ত চাকরি সে ছেড়ে দিয়েছে।
এহেন নৃশংস হত্যাকান্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি দ্রুত ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও স্পর্শকাতর হওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর একাধিক টিম মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করে।
সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও তদস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করা হয়।
পরবর্তীতে গত ২০/০৮/২০২২ইং তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ও কোতয়ালী থানার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপ” এর লিডার রতন সহ ০৬ জন সদস্য ১। মোঃ রতন (২০), পিতা- আবুল কাশেম; ২। মোঃ আকাশ হোসেন (২০), পিতা-মোঃ জহির মিয়া; ৩।মোঃ সিয়াম হোসেন (২০), পিতা-শাহালম সর্ব সাং-ফৌজদারী মফিজাবাদ কলোনী; ৪। মোঃ তানজীদ (১৯), পিতা- মনিরুল ইসলাম; সাং- ভাটপাড়া এবং একই তারিখ বিকালে ৫। মোঃ ইয়াসিন আরাফাত রাসেল (২১), পিতা-মৃত মোঃ ফয়েজ, সাং-কালিয়াজুড়ি, ৬। আসিফ হোসেন রিফাত (১৯), পিতা-মোহন মিয়া, সাং-বাঘমারা, সর্ব থানা-কোতয়ালী মডেল, জেলা-কুমিল্লা-দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেখানো অবস্থান হতে ০২ টি সুইচ গিয়ার, ০৪ টি বড় ছোরা ও ০১ টি এন্টি কাটার উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, নিহত ভিকটিম শাহাদাৎ হোসেন (১৭) সালে গ্রুপ এর সদস্য। ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা গত ০৬-০৭ মাস আগে ‘রতন গ্রুপ’ এর একজন সদস্যকে মারধোর করে। উক্ত মাটনার জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে শত্রুতা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য,’রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা ০২ নং ওয়ার্ড এলাকায় এবং ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ০৪ ও ০৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থান করে। উক্ত 02 ও ০৪, ০৫ নং ওয়ার্ডের মাঝখানে “ধর্মসাগর পার্ক’ অবস্থিত যা ১০ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যখনই ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা ঐ পার্কে যায় তখনই ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া দেয়, একইভাবে ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ঐ পার্কে গেলে ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া দেয়। ঘটনার দিন গত ১৯/০৮/২০২২ইং তারিখে আনুমানিক বিকাল ০৪:০০ ঘটিকার সময় “টাল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য তানজীদের পরিচিত এক ছোট ভাইকে মারধোর করে আহত করে।
ফলস্বরূপ ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যদের যেখানেই পাবে সেখানেই প্রতিহত করবে।
এমন সময় ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য তানজীদ এসে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদেরকে ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা পার্কে অবস্থান করছে মর্মে তথ্য প্রদান করে।
পরবর্তীতে, রতনের নেতৃত্বে ‘রতন গ্রুপ’ এর অন্যান্য সদস্যরা ফৌজদারী মফিজাবাদ কলোনী মাঠে একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যদের আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল এর সামনে ধাওয়া করে।
ধাওয়ার এক পর্যায়ে ভিকটিম শাহাদাৎ দৌড়ে পালাতে না পারলে রাব্বিল তাকে ধরে ফেলে ও তাৎক্ষণিক গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা শাহাদাৎ কে কিল-ঘুষি, লাথি ও এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে, স্থানীয় লোকজন শাহাদাৎ কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
আসামীদের দেওয়া তথ্য ও প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য রাব্বিল ভিকটিম শাহাদাৎ কে ধরে থাকা অবস্থায় তানজীদ সুইচ গিয়ার দিয়ে প্রথমে ভিকটিমকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে।
গ্রুপের অন্য সদস্য রানা ভিকটিম শাহাদাৎ কে কিল-ঘুষি মারতে থাকা অবস্থায় অন্য সদস্য আকাশ সুইচ গিয়ার দিয়ে শাহাদাৎ এর পেটের বাম পাশে বারংবার আঘাত করতে থাকে।
অন্য সদস্য হাসিব, রিয়াজ, সানি, সাব্বির ও আরো কতিপয় সদস্য ভিকটিম শাহাদাৎ কে লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে এবং রাসেল, সিয়াম, আসিফ বড় ছুরি নিয়ে ভিকটিম শাহাদাৎ কে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে রাখে এবং নবী ভিকটিমের পিঠে বড় ছুরি দ্বারা আঘাত করলে ভিকটিম শাহাদাৎ ঘটনাস্থলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা দ্রুত ঐ স্থান থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।