২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫ দিন আগে বাবা-মাকে খুনের পরিকল্পনা করে সাদ্দাম, বাঁচতে দেননি ছোট ভাইকেও

অনলাইন ডেস্ক।।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে চাঞ্চল্যকর তিন খুনের ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন ওই পরিবারের বড় ছেলে সাদেক হোসেন সাদ্দাম।

মা-বাবা ও ছোট ভাইকে হত্যার ঘটনায় আসামি সাদ্দামকে (৩০) আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। এর আগে বৃহষ্পতিবার রাতে সাদ্দামকে একমাত্র আসামি করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে তারই ছোট বোন বিবি জুলেখা।

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বাবা, মা ও ভাইকে হত্যার দায় স্বীকার করেন সাদ্দাম। এরপর বিকেলে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সোনা পাহাড় এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মোস্তফার মেয়ে বিবি জুলেখা বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ নিহতের পরিবারের বড় ছেলে সাদেক হোসেন সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর ওই দিন রাতেই সাদ্দাম পুলিশের কাছে হত্যার বর্ণনা দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনা এবং খুনের বর্ণনায় সাদেক হোসন সাদ্দাম জানান,

হত্যার পরিকল্পনা করেন ঘটনার ১৫ দিন আগে থেকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে বুধবার সকালে কেনেন সাদেক। এরপর ভোর ৪টায় প্রথমে বাবাকে, তারপর মাকে হত্যা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে পাশের রুম থেকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন মেজো ছেলে আহমদ হোসেন।

এ ঘটনায় সাদেক হোসেনের স্ত্রী আইনুন নাহারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে শুক্রবার ভোরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় সোনাপাহাড় এলাকার জনসাধারণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাদেকের সঙ্গে খুনের ঘটনায় আইনুন নাহার জড়িত। মামলার বাদী বিবি জুলেখা বলেন, `সাদেক একা এ ঘটনা ঘটায়নি।

তাঁর স্ত্রী আইনুন নাহারও জড়িত। সে পারিবারিক অশান্তিরও কারণ। ঘটনার রাতে সে ঘরে থেকেও নীরব ছিল। এ ঘটনায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি।’ এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও উপযুক্ত বিচার দাবি করেন জুলেখা।

এলাকাবাসী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোস্তফা সওদাগর তিন বছর আগে মেজ ছেলে আহমদ হোসেনকে বসতভিটার ১২ শতক জায়গার মধ্যে ৪ শতক লিখে দেন।

এই জমি কাল হয় মোস্তফার জীবনে। হত্যার প্রধান কারণ জমিসংক্রান্ত বিরোধ। জোরারগঞ্জ থানার ওসি নুর হোসেন মামুন জানান, হত্যার ঘটনায় মোস্তফার বড় ছেলে সাদেক হোসেন সাদ্দামকে বৃহস্পতিবার সকালে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি খুনের কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

তাঁকে কোর্টে চালান করা হয়েছে। তিনি অপরাধ স্বীকার করায় তাঁর স্ত্রী আইনুন নাহারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক নুর হোসেন মামুন জানান, সাদেক হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তাঁর বাবা-মা সব সময় তাঁর স্ত্রীকে বকাঝকা করতেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন তাঁরা।

এ ছাড়া তাঁর বাবা তাঁর মেজো ভাই আহম্মদ হোসেনকে ৪ শতক জায়গা লিখে দেওয়ার বিষয় জানতে পারেন। দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বুধবার তিনি চট্টগ্রাম বায়েজিদ এলাকা থেকে একটি ছুরি কিনে নিয়ে বাড়িতে আসেন।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার সময় তিনি প্রথমে তাঁর ঘুমন্ত বাবাকে ছুরি দিয়ে কোপান। এ সময় তার মা জেগে উঠলে তিনি মাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন।

মা-বাবার চিৎকার শুনে তাঁর ভাই পাশের রুম থেকে এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরি দিয়ে জখম করেন। এরপর তিনজনই গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্তে কাজ করছে জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই টিম।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!