২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লার লাকসামে আত্মগোপনে থাকা গ্রেফতার ৪ বন্ধুদের মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি কার্যক্রমে

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ অর্থ ও হিজরত বিষয়ক সমন্বয়কসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এরা নিকট আত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এতথ্য জানান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লার লাকসাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল, মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর, মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু এবং হেলাল আহমেদ জাকারিয়া।

র‌্যাব জানায়, ২-৪ বছর আগে নিকট আত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রানিত হয়ে তাত্ত্বিক ও সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় গ্রেপ্তারকৃতরা।

এদের মধ্যে বাচ্চু সংগঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, সোহেল ও হানজালা সমগ্র দেশে হিযরতকৃত সদস্যদের সার্বিক সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন। জাকারিয়া সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। এরা কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকেই তারা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছিলেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মাহমুদ কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন।

প্রায় দুই বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এক বছর আগে তিনি কুমিল্লার প্রতাপপুরে নিজের সেমি পাকা বাড়িসহ জমি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কেনেন। পরে সেখানে পরিবার নিয়ে চলে যান। সেখানে চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি পোল্ট্রি ফার্ম ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন।

তিনি আরও জানান, সংগঠনটির মহিলা শাখার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কিছু নারী এই সংগঠনে চাঁদা প্রদানে জড়িত আছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরূদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫৫ এর বেশি। এরা পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

এছাড়াও তাদেরকে আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

র‌্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ তরুণদের বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পার্বত্য এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়।

তারা সেখানে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ নেন। বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র চালানোসহ প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে মোট প্রশিক্ষণার্থী ৫০ এর অধিক রয়েছে বলে জানা যায়। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়াও, উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে। যারা দাওয়াতী, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে।

শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতী শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্ববধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!