মায়ের কৃত্রিম শ্বাস পাওয়া শিশুটি এখন সুস্থ
নিউজ ডেস্ক
রাজশাহীর আলোচিত শিশু হাফসা এখন সুস্থ। এক মাস একদিন বয়সী হাফসা মমতাময়ী মায়ের কোলে হাসছে, খেলছে। তার হাসিতে কেটেছে আতঙ্ক, মা-বাবার মনে ফিরেছে স্বস্তি।
হাফসাকে বাঁচাতে রিকশায় বসে মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দিতে দিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটছিলেন মা। এ সময় রিকশায় পাশে দাঁড়িয়ে হাফসার বাবা মা মা বলে ডাকছিলেন। সন্তানকে বাঁচানোর মা-বাবার এমন প্রাণপণ চেষ্টার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। রাজশাহী নগরীর রামচন্দ্রপুর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা রুম্পা-সজল দম্পতির সন্তান হাফসা খাতুন।রুম্পা-সজল দম্পতি জানান, শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে হাফসাকে তার দাদি গোসল দেওয়ার পর হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। আদরের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যান বাবা-মা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এ সময় প্রতিবেশীরা মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দিতে বলেন। রিকশায় চড়ে কৃত্রিম শ্বাস দিতে দিতে হাসপাতালে রওনা হন বাবা-মা।
হাফসার বাবা সজল মনি জানান, লকডাউনের কারণে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। হেঁটেই শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দিই। পথিমধ্যে অটোরিকশা পেয়ে যাই। রিকশায় স্বামী-স্ত্রী পালাক্রমে শিশুকে মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দিতে থাকি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছালে তারা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে। ভর্তি করান করোনা ওয়ার্ডে। পরে শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানের অধীনে চিকিৎসা করাই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সারকুলেশন কমে ও খিঁচুনিজনিত সমস্যায় শিশুটির এমন অবস্থা হয়েছিল। দুই দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যায় শিশুটি। পরে বাসায় নিয়ে যান স্বজনরা।
সজল জানান, তিনি এইচএসসি ও তার স্ত্রী এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর কীভাবে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করবেন এসব বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতেন। তবে হাফসা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাদের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রতিবেশীরা মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সবার দোয়া ও ভালোবাসায় হাফসা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
সজল আরও জানান, হাফসা আমাদের দ্বিতীয় মেয়ে। বিয়ের তিন বছর পর প্রথম মেয়ে মাহির জন্ম হয়। তার প্রায় সাত বছর পর হাফসার জন্ম হয়। সংসারে দুই মেয়েই আমাদের আদরের।
সজল বলেন, হাফসার বয়স এক মাস একদিন। কিছুদিন আগে নাম রেখেছি। নামটা আমি পছন্দ করে দিয়েছি। মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। হাফসার চিকিৎসার সময় ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সরা মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে বলেছেন। তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়ে মেয়েকে চিকিৎসক বানাবো।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই শিশুকে দেখতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তির দুই দিনের মাথায় শিশুটি সুস্থ হয়ে যায়। দুই দিন পরই তাকে বাড়ি নিয়ে পরিবার। শিশুটির মূলত খিঁচুনিজনিত সমস্যা হয়েছিল। হাসপাতালে আনার দিন তার মা জানান শ্বাসকষ্ট, এজন্য প্রথমে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, করোনা হয়নি। তখন তাকে অন্য ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।