কুমিল্লায় এক শিশুকে তিনবার ধর্ষণ; ৭০ বছরের বৃদ্ধ গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে ৭ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে।
গ্রামের কয়েকজন মাতবর ঘটনাটির মীমাংসার জন্য গতকাল শনিবার রাত ১০টায় শিশুটির বাড়িতে সালিসে আয়োজন করেন। সেখানে ধর্ষণের ঘটনায় ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
সালিসের শেষ পর্যায়ে রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ঘটনাস্থলে হাজির হন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। তাঁরা সেখানে পৌঁছালে মাতবরেরা মুহূর্তের মধ্যে পালিয়ে যান। তখন সেনা ও পুলিশ সদস্যরা শিশুটির মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে আটক করে নিয়ে যান।
গতকাল দিবাগত রাতে উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে আটক বৃদ্ধের নাম আবাদ উল্যাহ। ভুক্তভোগী শিশুটি এক প্রবাসীর সন্তান।
এ ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে শিশুটির মা বাদী হয়ে আবাদ উল্যাহর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালমাই থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ও মামলার আরজি থেকে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশুটি স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে শিশুটিকে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে গ্রামের এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত রান্নাঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন আবাদ উল্যাহ।
১০ দিনের ব্যবধানে একইভাবে শিশুটিকে তিনি তিনবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ৭ মার্চ দুপুরে বাড়ির অন্য শিশুদের মাধ্যমে জানতে পেরে মা জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি ধর্ষণের বর্ণনা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্যাতিত শিশুটির ধর্ষণের অভিযোগের বর্ণনা শুনে গ্রামের মাতবরেরা বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহকে সালিস বৈঠকে নিয়ে আসতে বললে গতকাল রাত ১০টার দিকে গ্রামের কয়েকজন ছেলে তাঁকে একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। বৈঠকে দুই পক্ষের লোকজন একমত হয়ে আবাদ উল্যাহকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ সময় তাঁর পক্ষে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে সালিস বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়, পরে পুলিশও আসে।
অভিযোগের বর্ণনা শুনে তাঁরা বৃদ্ধকে আট থানায় নিয়ে যান। স্থানীয় মন্তাজ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও আবদুস ছোবহানের পরিচালনায় সালিসে বৃদ্ধের পক্ষে ছিলেন ফজলুর রহমান ও জাকির হোসেন। আর শিশুটির পক্ষে ছিলেন আবদুল মালেক ও মানিক মিয়া। গ্রামের অন্য মাতবরেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সালিসে অংশগ্রহণকারী গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে গতকাল রাতে সালিস বৈঠক হয়েছে। শিশুটির ওষুধ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা রায় করেছিলেন সালিসের বিচারকেরা। বৃদ্ধের পক্ষে সর্দারের কাছে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাত ২টায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধকে আটক করে নিয়ে গেলে সালিস বৈঠক সমাপ্ত হয়ে যায়।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শিশুটির মা ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃদ্ধকে আজ বিকেলে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে।