ত্ব-হাকে উদ্ধার
নিউজ ডেস্ক
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. মজনু জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে ত্ব-হাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মজনু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে ত্ব-হাকে উদ্ধার করা হয়।ত্ব-হাকে পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হানিফও। তিনি বলেন,‘আমি কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি, উনাকেসহ আরেকজনকে পাওয়া গেছে। তারা রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।’
কোতোয়ালি থানার আরেক এসআই এরশাদ হোসেন জানান, শুক্রবার দুপুরে তাকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।কোতোয়ালি থানার আরেক এসআই এরশাদ হোসেন জানান, শুক্রবার দুপুরে তাকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মেহেদী হাসান এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বিকেল ৩টার দিকে রংপুরের আবহাওয়া অফিসের মাস্টারপাড়ায় ত্ব-হার শ্বশুর আজহারুল ইসলামের বাড়ি থেকে তাকে পুলিশ বের করে নিয়ে যায়।
নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর খোঁজ পাওয়া গেছে আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে তবে খোকন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তিনি মাস্টারপাড়ায় তাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন।
৮ জুন থেকে ত্ব-হাসহ চারজন নিখোঁজ হন। কোথা থেকে কীভাবে নিখোঁজ হন এমন তথ্য দিতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
অনেকে অভিযোগ তুলছিল, সমসাময়িক অন্যান্য ইস্যুতে আন্তরিকতা দেখালেও ত্ব-হার নিখোঁজের বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না সরকার। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল।
ত্ব-হার মা আজেদা বেগম জানিয়েছিলেন, গত ১০ জুন সকালে তাকে ত্ব-হা জানিয়েছিলেন, বেশ কদিন ধরে দুই অপরিচিত ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করছে। এ নিয়ে জীবন শঙ্কায় আছেন তিনি। তারা তার ক্ষতি করতে পারে। ঢাকায় চলে যেতে চান তিনি, ঢাকায় গেলে নিরাপদে থাকবেন।
আজেদা বেগম বলেন, ‘ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে ত্ব-হা তার তিন অনুসারীসহ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। শুক্রবার সাভারের একটি মসজিদে বক্তৃতা শেষ করে কিছুদিন ঢাকায় থাকার কথা ছিল তার।
‘ঢাকায় যাবার সময় হঠাৎ আমাকে বুকে জড়িয়ে খুব কান্না করছিল ত্ব-হা। নামাজে সেজদায় পড়ে তার নিরাপত্তা ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য দোয়াও করতে বলেছিল। এরপর ওই রাত থেকেই নিখোঁজ ত্ব-হা।’
ত্ব-হার খোঁজে গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। তিনি বলেছিলেন, ‘সে নিরীহ মানুষ, ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, নয়ত আমাকে তার কাছে নিয়ে যান।
‘যদি সত্যিকার অর্থে তিনি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হোক। আমি কিছু বলব না।’
কে এই ত্ব-হা?
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। দর্শন বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়েন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আহলে হাদিস সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ইসলামী বই প্রচুর পড়তেন।
হয়ে ওঠেন ধর্মীয় বক্তা। তার ধর্মীয় আলোচনার পক্ষে-বিপক্ষে আলাচনা এবং সমালোচনা দুটোই হতো।
ফেসবুক, ইউটিউব ঘেঁটে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রংপুর সদরের বাসিন্দা তোহা নিজেকে ইসলামি স্কলার দাবি করেন। পড়াশোনা শেষ না হলেও তিনি ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন অনেকদিন ধরেই, যা নিয়ে বিতর্কও আছে।
সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত ত্ব-হার বক্তব্যে ঢাকা শহরকে ‘কেয়ামতের শহর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিনি। দাবি করেছেন, ‘যে নারী পুরুষের সঙ্গে পাবলিক বাসে উঠে অফিসে যায়, যে নারী সহকর্মী পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তারা দাজ্জালের বাহিনীর সদস্য। ইমাম মাহাদীর বিরুদ্ধে এই নারীরাই যুদ্ধ করবে।’
ইসলাম ধর্মমতে দুনিয়া ধ্বংস তথা কিয়ামতের আগে মুসলিমদের সঙ্গে দাজ্জালের বাহিনীর লড়াই হবে। আর মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন ইমাম মাহাদী।
ইমাম মাহাদী পৃথিবীতে কবে আসবেন, এ নিয়ে অবশ্য ইসলামিক বক্তাদের মধ্যে বিরোধ আছে। কেউ কেউ নিজেকে ইমাম মাহাদী পরিচয়ও দিয়েছেন নানা সময়।
ত্ব-হার দাবি, পরকালে দোজখে নারীদের সংখ্যা বেশি হবে। আর এর জন্য তার ভাষায় ‘নারীর উদ্ধত’ আচরণ দায়ী।
প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও ত্ব-হা নানা সময় উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ আছে।