চট্টগ্রামে কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সের সংকট
✒️ নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি কোথাও আইসিইউ বেড খালি নেই। আইসিইউ বেডের জন্য আগে ভাগে সিরিয়াল দিয়ে রাখছে রোগীর স্বজনরা। আইসিইউ বেড পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারী প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সেরও সংকট রয়েছে।চিকিৎসকরা জানান, কোনো রোগী মারা গেলে আইসিইউ বেড খালি হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের অক্সিজেন লেভেল দ্রুত নেমে যাওয়ায় ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন অথবা আইসিইউর প্রয়োজন হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে তারা নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য ভিড় করছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি।
বৃহস্পতিবার প্রাপ্ত তথ্য মতে চট্টগ্রামে ২ হাজার ১০৯টি নমুনা পরীক্ষার পর নতুন করে ৭১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৯ জন। তার মধ্যে সাত জনই বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৮৬১ জন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি আছে। তার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ৫৩১ জন ও সরকারি হাসপাতালে ৩৩০ জন। তবে আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১৫০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। চিকিত্সকরা জানান, আইসিইউ বেডে চিকিত্সা সেবা পরিচালনার জন্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারী প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের চরম সংকট রয়েছে। আইসিইউ পরিচালনার জন্য ক্রিটিক্যাল মেডিসিন বিষয়ে ডিগ্রীধারী চিকিত্সকের প্রয়োজন। পাশাপাশি এই বিষয়ে ডিগ্রিধারী প্রশিক্ষিত নার্সেরও প্রয়োজন।কিন্তু আমাদের দেশে এই বিষয়ে চিকিৎসক ও নার্সের চরম সংকট বিরাজ করছে। চট্টগ্রামে এই সংকট আরো প্রকট। বেসরকারি হাসপাতালগুলো আইসিইউ চালু করলেও তাদের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নেই। আইসিইউগুলো এখন অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা পরিচালনা করছে। আবার এতগুলো আইসিইউ বেড পরিচালনার জন্য চট্টগ্রামে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট চিকিত্সকেরও সংকট রয়েছে। তিন শিফটে সেবা পরিচালনার জন্য কয়েক শ অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট চিকিত্সকরাই নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চাহিদা পূরণ করছে। ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রিধারী চিকিত্সক সংকটের মধ্যে নগরীতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ চিকিত্সা পরিচালিত হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, চট্টগ্রামে উপজেলাগুলোতে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অযথা ঘোরাঘুরি করছে, দোকানে বাজারে আড্ডা দিচ্ছে। গত আট দিনে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ১ হাজার ২৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১১৬ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে। এই হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ১৮টি। কোনো বেডই খালি নেই। হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মো. আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের এখানে গ্রাম থেকে প্রচুর রোগী আসছে। আক্রান্তদের অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। শ্বাসকষ্টও বেশি দেখা যাচ্ছে। চাহিদা থাকলেও খালি না থাকায় আইসিইউ বেড দেওয়া যাচ্ছে না।’ চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঁচটি আইসিইউ বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বেড রয়েছে ৫০টি। বর্তমানে ৩৬ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে। সরকারি এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম নেই। সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ চলছে। আইসিইউর পাঁচটি বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. বখতিয়ার বলেন, ‘আইসিইউতে দ্রুত ভেন্টিলেটর স্থাপন ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটে এখনো বেড খালি আছে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রস্তুত করে রেখেছি। এই হাসপাতালের চিকিত্সকরা জেনারেল হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা দিচ্ছেন। যদি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল ও জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীর জায়গা না হয় তখন হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু করব।’
চট্টগ্রামে বেসরকারি আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৪৯ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে। করোনা ইউনিটের ১৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই। হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, করোনা রোগী সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা করোনা ইউনিটের পরিধি আরো বাড়ানোর চিন্তা করছি। কোনো রোগী মারা গেলে আইসিইউ বেড খালি হচ্ছে। অন্যথায় প্রচুর চাহিদা থাকলেও আইসিইউ বেড দেওয়া যাচ্ছে না।’