২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এক শিক্ষার্থীর শিশুকে কোলে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান

অনলাইন ডেস্ক।।
ছাত্রীর সন্তান কোলে শিক্ষকের পাঠদানের ছবি ভাইরাল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক শিক্ষার্থীর শিশুকে কোলে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেছেন পঙ্কজ কান্তি মধু (৪৫) নামে এক শিক্ষক। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার (৩ অক্টোবর) দুপুরের এ ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের।

ভাইরাল ওই ছবিতে দেখা যায়, শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু তার ছাত্রীর কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে পাঠদান করছেন। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে তার মা শ্রেণিকক্ষে পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিল না।

এসময় শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু শিক্ষার্থীর সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলেন। এসময় কে বা কারা ছবিটি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করে।

শিক্ষক পঙ্কজ মধু গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার বিটকাটিয়া গ্রামের লিও মধুর ছেলে। গত ১১ বছর ধরে সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছেন তিনি। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামে বসবাস করেন তিনি।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়। এক বছর পর ওই শিক্ষার্থীর একটি কন্যা শিশুর জন্ম হয়।

সম্প্রতি বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু জানতে পারেন দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তিনি তাকে বিদ্যালয়ে আসার জন্য খবর দেন।

রোববার সকালে ওই শিক্ষার্থী তার তিন মাস বয়সী কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু কোলে সন্তান থাকায় ক্লাসের পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিল না।

এ সময় শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে পাঠদান করান। তখন কেউ একজন ছবিটি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। সাথে সাথে ছবিটি ভাইরাল হয়।

এ ব্যাপারে শিক্ষক পঙ্কজ মধু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ছবিটি যে ফেসবুকে ছড়িয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা করিনি।

২১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। আমি একজন শিক্ষক হিসেবেই বাঁচতে চাই। শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা চিন্তা করে আমি তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাই।

ওই শিক্ষক বলেন, সম্প্রতি স্কুল খোলার পর আমি যখন জানতে পারি করোনাকালীন দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল।

পরে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলার পর আজ রোববার সে তার বরের সাথে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে আসে। তখন আমি শিক্ষার্থী ও তার স্বামীকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করি।

তখন ওই শিক্ষার্থী তার শিশুকে কোলে নিয়ে ক্লাসে যায়। কিন্তু শিশুটির জন্য সে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিল না। তাই আমি তার শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাই।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, পঙ্কজ কান্তি মধু ইংরেজির একজন ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সে খুব আন্তরিক। শ্রেণিকক্ষে সে সব সময় শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করেন।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, শিক্ষক ক্লাসটি করানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কাজটি হয়তো ঠিক করেছেন।

কিন্তু অন্য দৃষ্টিতে দেখলে কাজটা ঠিক হয়নি। এখানে দুইটি বিষয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে, এক হচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ক্লাস করানোর কারণে অন্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।

এ সময় কোনো আয়াকে ডেকে এনে শিক্ষক শিশুটিকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারতেন। কারণ বিদ্যালয়ে আয়া আছে। দ্বিতীয়ত, করোনার প্রভাবে এক বছর আগে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। এটা একটি বাল্যবিয়ে জনিত অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।

তিনি বলেন, আমি শুনেছি ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পরে ৫০০ টাকা দেওয়া হলে বয়স বদলানো যায়। আমরা এগুলো যদি কঠিনভাবে না দেখি তা হলে কেবল শিক্ষা নিয়ে কথা বললে হবে না। করোনায় স্কুল বন্ধ রাখার কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

ছেলেরা রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য বিদেশ চলে গেছে। মেয়েদের অনেকে মাদ্রাসায় চলে গেছে। অনেকের আবার বিয়ে হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানান ওই শিক্ষাবিদ।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!